"আমার বাংলাদেশ প্রাচীন যুগ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ হাজার বছরের বাংলাদেশ ছিল সুখসম্পদে পূর্ণ। বাংলাদেশের উর্বর মাটি ছিল সােনাফলা। আর এদেশের মানুষও ছিলেন মেধাবী ও পরিশ্রমী। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, শিল্পকলা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। চমৎকার করে তারা সাজিয়েছিলেন আমাদের এই প্রিয় দেশটিকে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, পূর্বপুরুষদের গৌরবের উপাখ্যান জানার মতাে বইপত্রের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস যেটুকু জানা যায় তা প্রধানত রাজা, সুলতান আর সম্রাটদের কথা। সাধারণ মানুষের জীবন, শিল্পসংস্কৃতি এসব নিয়ে খুব একটা তথ্য নেই। দেশকে জানার ক্ষেত্রে এই শূন্যতা পূরণের জন্যই তিন পর্বে সাজানাে হয়েছে 'আমার বাংলাদেশ’ নামের তিনটি বই। বইটির প্রথম পর্বে উঠে এসেছে প্রাচীন বাংলার পরিচয়। সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি কিশােরপাঠকদের কথা বিবেচনায় রেখে এই বইটি বিন্যস্ত করা হয়েছে। লেখার পাশাপাশি এতে সন্নিবেশিত হয়েছে বর্ণিল চিত্রমালা। বাংলার ইতিহাসের আদিকাল থেকে বইটির শুরু। সাম্প্রতিক কালে গবেষকগণ নিশ্চিত হয়েছেন, এদেশে একসময় পাথরযুগের মানুষের বিচরণ ছিল। কোনাে কোনাে অঞ্চলে পাথর যুগের মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত পাথুরে হাতিয়ার পাওয়া গেছে। বইটিতে রয়েছে এসবের সচিত্র পরিচয়। চেষ্টা রয়েছে বাংলার মানুষের আদি পরিচয় জানার। এদেশের প্রাচীনকালের প্রত্নঅঞ্চল-যেমন- মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, ভরত ভায়নার পরিচয় রয়েছে এখানে। পালযুগে বৌদ্ধবিহারগুলাে কীভাবে শিক্ষার আলাে ছড়িয়েছিল, শিল্পকলার নানা ক্ষেত্রে বাংলার মানুষ কতটা যােগ্যতার পরিচয় দিতে পেরেছিলেন-এই বইটির লেখায় রেখায় চিত্রমালায় তার সবকিছুই প্রতিভাত হয়েছে। সাবলীল ভাষায় লেখা এই বইটি সহজেই পাঠকমনকে টেনে নেবে।
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৯৬০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গনাইসার গ্রামে। পিতা মরহুম মোসলেম চোকদার ও মা মরহুমা রেজিয়া বেগম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফারসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৮৫ সালে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। সত্তর ও আশির দশকে ‘শাহনাজ কালাম’ লেখক নামে ছড়া ও গল্প লিখিয়ে হিসেবে পরিচিত হলেও পেশা জীবনে এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠক্রমভিত্তিক গ্রন্থ রচনা এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গ্ৰন্থ ও প্ৰবন্ধ লেখায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ড. শাহনাওয়াজের রচিত ও সম্পাদনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম লিখে আসছেন।