"মানুষের কাহিনী" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মানুষের কাহিনী দীর্ঘদিনের—লক্ষ লক্ষ বছরের। মানুষের কাহিনী এবং সভ্যতার ইতিহাস—একটির সাথে অন্যটি ওতপ্রােতভাবে সম্পর্কিত। মানুষের জাগতিক বিবর্তনের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে রূপান্তরিত ও বিকশিত হয়েছে সমাজ-সভ্যতা। গড়ে উঠেছে সুষ্ঠু জীবনযাপনের অনিবার্য উপাদান—সংস্কৃতি। আদিম যুগের মানুষের জীবনসংগ্রাম, প্রকতি ও পরিপার্শ্বের সাথে লড়াই, অনিরাপদ জীবনযাপন প্রাঞ্জল ভাষায় বিধৃত হয়েছে এ বইয়ে। বিভিন্ন আবিষ্কারেরও রয়েছে সরল বিশ্লেষণ। মূলত আগুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই সূচনা ঘটেছে সভ্যতার উন্নতি ও বিকাশ। মুন্না ও মুন্নিসহ অন্য শিশুদের গল্প বলার মাধ্যমে বিধৃত হয়েছে মানুষের ইতিহাসের ঘটনা পরম্পরা। ইতিহাস বরাবরই সাধারণের আগ্রহজাগানিয়া বিষয়। মানুষ স্বভাবতই কৌতূহলপ্রবণ—জানতে চায় নিজের অতীত ইতিহাস, বুঝতে চায় সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ, অনাগত সময়চিত্র। খ্যাতনামা লেখক রাহুল সাংকৃত্যায়ন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মানবেতিহাসের পর্যায়ক্রমিক ধারা বর্ণনা করেছেন। ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে, সাহিত্যনিষ্ঠ মন ও মননে শুনিয়েছেন চমকপ্রদ গল্প। যে গল্প একই সাথে মানুষ ও পৃথিবীর কথা জানান দেয়। ইতিহাস এবং সাহিত্য-বিপরীতধর্মী দুটি বিষয় একত্রে মিলিত হয়ে রচনা করেছে অনুপম এক উপাখ্যান। সাহিত্য এবং ইতিহাসের মিথস্ক্রিয়ায় মানুষের কাহিনী বইটি হয়ে উঠেছে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন, কাল মহাকালের অখণ্ড দলিল।
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।