উচ্ছ্বসিত প্রেমে ভরপুর এক কাব্যিক নদী।কবির সৃজন ভাবনার কথা বলছি- সব কথা হয়তো বলা হয়ে গেছে। কিন্তু সব কথা সবভাবে বলা হয়নি। তাই তো কবির কাব্যচর্চা নিরর্থক নয়; অনর্থক নয় কবির কাব্য প্রয়াস- প্রচেষ্টা। কবি তার কাব্যভুবনের একজন নিরন্তর ভাবুক, চিরন্তন দার্শনিক। তার দর্শন ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রেম এমনই অনিবার্য ও পরম আরাধ্য বিষয়। পঠিত ‘উচ্ছ্বসিত নদী’ কাব্যগ্রন্থের বিদগ্ধ কবি ও প্রেমিক প্রদীপ কুমার কর্মকারের কাব্যচর্চা বিষয়টি অত্যন্ত প্রকট। কবির কাছে প্রেম যেন এক ‘উচ্ছ্বসিত নদী’। প্রেম মানবজীবনের এক অনিবার্য রসায়ন। কারো জীবনে প্রেম আসে সরবে, কারো কাছে আসে নীরবে। কারো আছে আসে সময়ে, কারো আসে অসময়ে। ‘উচ্ছ্বসিত নদী’র বুকজুড়ে জগতের তাবৎ প্রেমের জোয়ার-ভাটার সুস্পষ্ট অনুভব অনুভ‚ত হয় আটষট্টিটি সমিল, অমিল গদ্য কিংবা পদ্য কাব্য ভাষায়। প্রচ্ছদশিল্পী সোহানুর রহমান অনন্তর সুন্দর নান্দনিক প্রচ্ছদে কবি প্রদীপ কুমার কর্মকারের ‘উচ্ছ্বসিত নদী’র কাব্যগ্রন্থের ‘প্রেমতরী’ কবিতাটির সার্থক রূপায়ণ ঘটেছে। সেই সাথে কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও যথেষ্ট দরদি ও যত্নের ছাপ রাখতে শতভাগ সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে বইটি প্রকাশে। সমগ্র কাব্যগ্রন্থে কবি প্রেমেরই জয়গান গেয়েছেন। তার প্রেম বিচিত্র, তার প্রেম বহুগামী। প্রেমের ধারাবাহিক স্বরূপ উদ্ঘাটনে কবি খুবই তৎপর ছিলেন কাব্য বিবেচনায়। তাই তার কাছ থেকে আমরা প্রেমের বিভিন্ন শিরোনামের কবিতার স্বাদ গ্রহণ করি। তিনি প্রেমিকাকে দেখার পর লিখেছেন ‘কে তুমি’; উত্তর না পেয়ে লিখেছেন ‘নক্ষত্র তুমি’। তারপর একে একে তাকে জানাতে হয় ‘প্রেমের আহ্বান’, লিখতে হয় ‘পত্র’। কিন্তু তার প্রেমিকা ‘নিরুত্তাপ নীরবতা’ গ্রহণ করে। ফলে কবিকে ‘বিরহ অনলে জ্বলে’, ‘প্রতীক্ষা’ করতে হয়। কবিকে গ্রাস করে ‘বিষণœতা’ ‘দরশন নাহি মেলে’ তবু প্রেমিক কবি তার প্রেমিকার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে বলেন, তুমি আমার ‘দিল দরদি প্রিয়া’ আর ‘অতীব নগণ্য আমি’। এভাবে প্রতিটি কবিতা ব্যবচ্ছেদ করলে আমরা ‘উচ্ছ্বসিত নদী’ কাব্যগ্রন্থটিকে প্রেমেরই আদ্যোপান্তে এক অভিধান হিসেবে পাব। তার ‘উচ্ছ্বসিত নদী’ ভরপুর হয়ে আছে প্রেমের পরিণাম শঙ্কায়। তাই তিনি লিখেছেন কবিতা ‘ত্রিভুজ প্রেম’, ‘অসম ভালোবাসা’, ‘অপরিণত প্রেম’, ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ ও ‘সন্দেহ’। কবির সব প্রেমের মূলে আছেন হয়তো তার ঈশ্বর। তাই কি তিনি কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তার পরম আরাধ্য গুরুদেবকে? আবার একটি সাংস্কৃতিক পরিবার পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা কবি আধুনিক করপোরেট ভালোবাসা সচেতনও বটে। তাই তো ভালোবাসা দিবসে তিনি লিখেছেন ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ কবিতা। আবার হাল আমলের প্রেম পাগলা, বিয়ে বাতিক মুখোশধারী প্রেমিক-প্রেমিকা বা তথাকথিত রোমিও-জুলিয়েট বা মোবাইল প্রেম সম্পর্কে খুব সজাগ কবি। তাই সার্থকভাবে লিখেছেন ‘বিশেষ স্বভাব’ কবিতাটি। সর্বোপরি, কবি বিশ্বাস করেন : ‘যে ভালোবাসা মানুষকে প্রতারিত করে/মিথ্যার ইন্দ্রজাল পরিয়ে জীবন ধ্বংস করে,/ভালোবাসার সংজ্ঞাকে পাল্টে দেয়/সে ভালোবাসা ভালোবাসাই নয়, প্রহসন মাত্র (কবিতা : ভালোবাসার রূপ)। কবির এই চিরায়ত বিশ্বাস ও দর্শনকে আমরা কাব্যপিয়াসীগণ একমত হতেই পারি। তাই সাহিত্যদেশ থেকে প্রকাশিত ঝকঝকে ছাপার বোর্ড বাঁধাই ৮০ পৃষ্ঠার ‘উচ্ছ্বসিত নদী’কে মাত্র ১৬০ টাকার বিনিময়ে আপন করে নিতে পারি।
কবি প্রদীপ কুমার কর্মকার লেখালেখি করছেন দুই যুগেরও অধিককাল ধরে। প্রচারবিমূখ বলেই তিনি বই প্রকাশে আগ্রহী ছিলেন না। শুভাকাক্সিক্ষদের প্রেরণায় প্রথম কবিতার বই ‘উচ্ছ্বসিত নদী’ প্রকাশিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-তে। ছোটগল্পের বই ‘এক ঝুড়ি গল্প’ প্রকাশিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে। এবার প্রকাশিত হল উপন্যাস ‘কপোত কপোতি’। তার রচিত কবিতা, ছোটগল্প বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক গুণের অধিকারী এই লেখকের জন্ম ১৯৬০ সালের ১৩ মার্চ পটুয়াখালী সদর উপজেলার নতুন বাজার, চরপাড়ায়। পিতা শ্রী নরেন্দ্র লাল কর্মকার এবং মাতা শ্রীমতি যমুনা বালা কর্মকার। কবি প্রদীপ কুমার কর্মকার মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এক্টোপ্যারাসাইট শাখা) হিসেবে প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান-ঢাকায় কর্মরত। একজন প্রকৃত পেশাজীবী ও সংগঠক হিসেবে তার খ্যাতি ও সুনাম রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বেতারের বিশেষ গ্রেডের শিল্পী। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার-ঢাকার নিয়মিত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসেবে খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল বেতারে সংগীত পরিবেশন করে আসছেন। এছাড়াও তিনি ‘কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন-বাংলাদেশ’ ভোলা জেলা শাখায় পরপর দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ‘বিসিএস লাইভস্টক অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন’র একজন সক্রিয় কর্মী। লেখালেখি, পেশাগত ও সামাজিক কল্যাণে তার সংশ্লিষ্টতা অনুকরণীয়।