মেধা-মনীষা, প্রজ্ঞা-ধী, কৃতি-কীর্তিতে অনন্য এক মানুষ আবুল মাল আবদুল মুহিত। চিন্তায়-কর্মে-সৃজনে তিনি এগিয়েছেন জীবনে। আশি-উত্তীর্ণ সজীবপ্রাণ মুহিত দেশজাতিকে উৎসর্গ করেছেন অন্তপ্রাণ। বিশেষত তার চিন্তাজাত লেখনি সমাজকে করেছে আলোকিত। বর্ণাঢ্য জীবনের আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত মুহিতের জীবন। সে আলোর দীপ্তিতে ভাস্বর তার মননশীল রচনাজগৎ । তার প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে, এখনো তার কলম ফলপ্রসূ । তার রচনাভাণ্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন নিয়ে যেমন চমৎকার গ্রন্থ রচনা করেছেন, তেমনি ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতি রোমন্থন, দেশ-সরকারের রূপরেখা একেছেন মৌলিক চিন্তায়। মুহিত সম্পাদনা করেছেন বেশ কয়েকটি গ্রন্থ। আবুল মাল আবদুল মুহিত রচনাবলি তার এ-যাবৎ প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থের মহাফেজখানা। এ রত্নভাণ্ডারে রয়েছে ১৯টি গ্রন্থ। গ্রন্থগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশের অভু্যদয়, রাজনৈতিক ১৯৭১, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, নানা দেশ নানা জাতি, মহাপুরুষদের কথা কাছে থেকে দেখা, স্মৃতির মণিকোঠায়, বাংলাদেশ : জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাতাশ মাস, Problems of Bangladesh, An agenda for good governance, Bangladesh in the twenty-first century, State language movement in East Bangal, Thoughts on development administration, Issues of governance in Bangladesh, Bangladesh : Emergence of a Nation, The deputy commissioner in East Pakistan, American response to Bangladesh liberation war. ১০ খণ্ডে প্রকাশিত এই সম্ভার দেশ, জাতি এবং মানবতার কল্যাণে নিবেদিত এক গুণী মানুষের সারস্বত অবদানেরই অনন্য দলিল। রচনাবলি পাঠান্তে পাঠক এক সৃজনীচিন্তার মননশীল ভুবন পরিভ্রমণের আনন্দে আপুত হবেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত লেখক, গবেষক, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, প্রশাসক, পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটের এক সম্ভান্ত পরিবারে ২৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোরে ছাত্র সংগঠন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৫ সালে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সর্বদলীয় কর্মপরিষদের আহবায়ক থাকাকালে কিছুদিন জেলেও ছিলেন। কর্মজীবনে পূর্ব পাকিস্তান এবং কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের প্রায় ১৩ বছর চাকরি করে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে অর্থনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবে নিযুক্তি পান ১৯৬৯ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ৩০ জুনে তিনি আনুগত্য পরিবর্তন করেন এবং মার্কিন কূটনৈতিক, শিক্ষামহল ও সংবাদমাধ্যমে প্রচারণায় ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৫ বছরের সরকারি চাকরির পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে স্বেচ্ছা অবসরে যান ১৯৮১ সালে । ১৯৮২ এবং ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন এবং ESCAP-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন গড়ে উঠে। প্রথমে ‘পরশ এবং পরে বাপা'-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশনেরও পরপর দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পেয়েছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।