“ভূতগুলো খুব দুষ্টু ছিল" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ভূতেরা, মানে একটি ধাড়িভূত উনত্রিশটি রূপ ধরতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে রূপ ধরা একটি একটি করে বাড়ে তাদের। মানুষের যেমন বাড়ে বুদ্ধি । কিন্তু রমাকান্তর বয়স কম। সে এখনও নাবালক ভূত । সবগুলাে রূপ ধরতে শেখেনি। শিখেছে মাত্র পাঁচটি। মানুষ ঘােড়া কুকুর সাপ আর বাঘ। তবে রূপ নিয়ে রমাকান্তর কোনাে অহংকার নেই । একটুখানি দুঃখ আছে । তার ভারি শখ পাখির রূপ ধরা । কিন্তু পাখির রূপ হচ্ছে নয় নম্বর । শিখতে আরও আট দশ বছর লাগবে। ইস চোখের পলকে যদি আট দশটি বছর কেটে যেত! ইচ্ছে করলেই যদি পাখি হতে পারত রমাকান্ত, তাহলে মাটিতে সে নামতই না । খেলতে যেত আকাশে । ঘুমঘুমির মাঠে কোনাে ভদ্র ভূত খেলতে আসে? এমন পচা মাঠ, একটু আনমনা হলেই বাড়ি ফেরার পথ হারিয়ে যায়। আর খেলার সময় বুঝি কেউ পথের কথা ভেবে বসে থাকে! মাঠের প্রান্তে বসে এসব ভেবে রাগও হচ্ছিল রমাকান্তর । কিন্তু রাগ করে তাে লাভ নেই। ফেরার পথ যখন হারিয়েই গেছে কী আর করা । দিনটা এই মাঠে বসেই কাটাতে হবে। রাত হলে পথ খুঁজে বাড়ি ফিরতে হবে । বাবা-মা চিন্তায় আছে। কিন্তু ভূত হয়ে কি দিন কাটানাে যাবে? মাঠে বসে থাকা যাবে! আরে না! তাহলে কেচ্ছা কেলেংকারি হয়ে যাবে। কেউ যদি দেখে আস্ত একটা ভূত বসে আছে মাঠে তাহলেই হয়েছে! দিকে দিকে সাড়া পড়ে যাবে। ভূত দেখতে ভিড় করবে রাজ্যের লােক। রমাকান্ত ভাবল সে অন্য কোনাে রূপ ধরবে। কী রূপ?
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।