"চর্যাপদ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ চর্যাপদ আমার দুঃসাহসী প্রকাশক বন্ধু শ্রীবারীন্দ্র মিত্রের অনুকূল্যে প্রকাশিত হল। ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রাচীন বাংলা কাব্য সম্পর্কে উৎসাহী সাধারণ পাঠকদের জন্যেই এই গ্রন্থ রচিত হয়েছে। চর্যাপদ বাংলা কাব্যের ঊষালগ্নে উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া সাধারণ পাঠকের আগ্রহ এই গীতি-সমষ্টি সম্পর্কে খুব আশাব্যঞ্জক নয়। হয় নিছক ধর্মগ্রন্থ, নয় বাংলা ভাষাতত্ত্বের উপাদান—এই দুই ভাবেই চর্যাপদের বিচার, আলােচনা ও তার গুরুত্ব নির্ধারণ হয়েছে। ধর্মগ্রন্থ বা ভাষাতত্ত্বের দিকে চর্যাপদের নিঃসংশয় গুরুত্ব আছে। কিন্তু চর্যাপদ তাে বাংলা গীতিকাব্যেরও আদি রূপ। সেইজন্যে চর্যাপদের কাব্যমূল্য সম্বন্ধেও আমাদের ভাববার আছে, আলােচনার অবকাশ আছে। আমি আমার এই গ্রন্থে চর্যাপদের আধ্যাত্মিক এবং ভাষাতত্ত্বগত গুরুত্বের দিক ছাড়াও সাধারণভাবে চর্যাপদের কাব্যমূল্যের দিকেই ঝোক দিয়েছি বেশি। চর্যাগানের সংশোধিত পাঠ, পাঠান্তর, আধুনিক বাংলায় রূপান্তর, রূপকাৰ্থ, অপ্রচলিত কোনাে কোনাে শব্দের অর্থ ও টীকা এবং একটি সংক্ষিপ্ত শব্দসূচীও দিয়েছি পরিশিষ্টে-যাতে গানগুলির সঙ্গে সাধারণ পাঠক পরিচিত হতে পারেন এবং বইটিও সম্পূর্ণ হয়। সাধারণ পাঠক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যেই এই বই বলে আলােচনা যাতে নীরস না হয়ে পড়ে সেদিকেও আমার সাধ্যমত নজর রেখেছি। এখন, যাদের যাদের জন্যে এই আলােচনা তাঁরা যদি এই গ্রন্থ পড়ে প্রাচীন বাংলা কাব্য সম্পর্কে উৎসাহিত এবং আগ্রহী হন তাহলেই জানব আমার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছে৷
তিনি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতবিদ্যা বিভাগে এক দশকের বেশি সময় অধ্যাপনা করেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জাগরণ, নিদ্রাহীনের গান, মধ্যদিনের গান প্রভৃতি। তাঁর লেখা অন্যান্য বিষয়ের গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ ও অলংকার, চর্যাপদ প্রভৃতি।