"ধর্ম রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা" বইটির মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ ১৯৯৩ সালে ‘ধর্ম, সংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িকতা' নামে আমার যে প্রবন্ধ সংকলনটি চিরায়ত প্রকাশন কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল এই সংকলনটি প্রকৃতপক্ষে তারই পরবর্তী সংস্করণ হলেও এর নাম পরিবর্তন করে এখন রাখা হয়েছে ‘ধর্ম রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা'। এই নাম পরিবর্তনের কারণ সংকলনটিতে অন্তর্ভুক্ত প্রবন্ধগুলিতে মূলত ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়টিই আলােচিত হয়েছে। নাম পরিবর্তনের সঙ্গে এই সংকলনের শরীরে আর একটি পরিবর্তন করা হয়েছে। চিরায়ত প্রকাশন কর্তৃক প্রকাশিত বাঙলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার, নামক সংকলন গ্রন্থটিতে অন্তর্ভুক্ত প্রবন্ধগুলির মধ্যে ছ'টি ‘ধর্ম, সংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িকতা'তেও রাখা হয়েছিল। সেই ছ'টি প্রবন্ধ এই সংকলন থেকে বাদ দিয়া তার পরিবর্তে সাতটি নতুন প্রবন্ধ সংযােজিত হয়েছে। প্রথম সংস্করণের মুখবন্ধে ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে যা লিখেছিলাম সে পরিস্থিতির মধ্যে কোনাে মৌলিক পরিবর্তন এ পর্যন্ত ঘটেনি। তবে এ ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য যা ঘটেছে সেটা হলাে, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরাে অবনতি। এটা ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের বেলাতেই প্রযােজ্য। এই অপরিবর্তনের কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতেও এই সংকলনটির প্রাসঙ্গিকতা বিন্দুমাত্র কমেনি। সেজন্য আমি আশা করি, আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে, বিশেষত দুই বাঙলায়, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে চিন্তাভাবনা ও বাস্তব সংগ্রামের ক্ষেত্রে এই সংকলন গ্রন্থটি কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বদরুদ্দীন উমরের জন্ম ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিম বাঙলার বর্ধমান শহরে। মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, রাজনীতিবিদ, প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ হিসেবে তিনি বাঙলাদেশে সুপরিচিত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. পাশ করার আগেই ১৯৫৪ সালে দর্শন বিভাগে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে এম. এ. পাশ করার পর ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এই তিন বিষয়ে অনার্স ডিগ্ৰী অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগেরও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। ষাটের দশকে প্রকাশিত তাঁর তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) তত্ত্বকালে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময় পাকিস্তান সরকারের সাথে তাঁর বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং তিনি নিজেই ১৯৬৮ সালে অধ্যাপনার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।