সেই লাল দালান-সুদৃঢ়, যেন শত বছরের অবিচল কাঠামো এক; সুগম্ভীর-স্টেশনটি শতাব্দীপ্রাচীন জংশনও বটে; ট্রেন আসে-যায়, মানুষ ওঠে-নামে, ব্যস্ত মানুষের দৌড়, হকারদের হাঁক, কুলি-চা’অলাদের জোর কদম-সব মিলিয়ে দেখার মতো মহাশোরগোলময় এক কাণ্ড! স্টেশন ছাড়িয়ে সামান্য দূরে, বিছানো সবুজ ঘাসে আমরা বসি; আর দেখি-থৈ থৈ মানুষের জীবনের প্রতি অফুরান আহ্বান…’’ … ভাস্কর্যপ্রতিম এক আশ্চর্য গদ্যে মাহবুব আজীজ জীবন, মানুষ, প্রকৃতি, সঙ্গ ও নিঃসঙ্গতার জর্নাল ‘ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি’ লিখে চলেন। এই জর্নালের স্তরে স্তরে বিচিত্র মানুষ ভিড় করে; যারা নানা টানাপড়েনের মধ্যেও জীবনকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে তুমুল বেঁচে থাকতে চায়। এখানে ভিড় করে অনিশ্চয়তা, আসে আকস্মিক দুর্বিপাক, ঘন হয়ে আসে প্রতিকূলতা; আর এসবের মধ্যেও অন্তরপ্রবাহের মতো ছড়িয়ে থাকে সুবিস্তৃত সবুজ মাঠ, স্কুলের নোনাধরা দেয়াল, নিবিড় স্পর্শের ফল্গুধারা, বেঁচে থাকার অনাবিল সুস্বাদ। আসে মানুষের মুখের পর মুখ-তাদের আনন্দ-বেদনা-সুখ ও দুঃখের গল্পের পর গল্প মাহবুব আজীজ তার অন্তর্ভেদী ভাষায় নিখুঁত শিল্পীর মতো আঁকতে থাকেন। লেখকের কলম খুঁজে পায় প্রিয় অগ্রজ লেখকদের বিছানো পথ-পূর্ব প্রজন্মের সমৃদ্ধ শস্যক্ষেতের চিত্রও তার জর্নালের বিষয় হয়ে ওঠে। ‘ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি’-তে রয়েছেন এমন এক লেখক-যিনি ব্যক্তিগত-গীতিময়-স্মিতহাস্য ও একই সঙ্গে গাঢ় নৈর্ব্যক্তিক; ঘটনা ঘটে যায়, তিনি দেখতে থাকেন; মানুষের পাশে তিনি যেন ছায়া-অনুচ্চ তবে একান্ত—; অনন্তর মানুষ ও মানুষের বহুবিধ গল্প উঠে আসে তার লেখায়; এই সব লেখার শিরা-উপশিরায় মাহবুব আজীজ ছড়িয়ে দেন তার পরিপার্শ্ব, আনন্দ, হাহাকার, আবিষ্কার ও বেদনা। আর, সবকিছুর মধ্যে এই লেখক অনিবার্য করে তোলেন জীবন ও জগতের তীব্র সত্যের ইঙ্গিত-সরাসরি নয়; মৃদু-তবে সুতীক্ষ্ণ ও অতলস্পর্শী। তাই এই গ্রন্থ চিরকালীনতার এক শিল্পঘোর নিয়ে উপস্থিত হয়। দৈনিক সমকালের সাময়িকী ‘কালের খেয়া’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত এই জর্নাল বিপুল পাঠকনন্দিত।