প্রতিটি ভাষারই বর্ণমালা থাকে। বাংলা ভাষারও রয়েছে বর্ণমালা। বাংলা ভাষাকে শিখতে এ বর্ণমালার কোনো বিকল্প নেই। বাংলা ভাষাকে নিয়ে আমাদের গর্বের অন্ত নেই। কেননা এ ভাষায় কথা বলার জন্য আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দিতে হয়েছে বুকের তাজা রক্ত। তাই বাংলা ভাষাকে ঘিরে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। রাব্বানী চৌধুরীর বই ‘ছড়ায় শিখি পড়া’ বইটি বর্ণমালা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অভিনব বই। বাংলা ভাষার বর্ণমালার মধ্যে দুটি ভাগ রয়েছে। একটি স্বরবর্ণ ও অন্যটি ব্যঞ্জনবর্ণ। এ বইটিতে দুটি দুটি ব্যঞ্জবর্ণকে নিয়ে ছড়া তৈরি করা হয়েছে। যেমন― ক গেল কাকার সাথে কাক যখন ডাকল খ গেল খইয়ের সাথে আম যখন পাকল। স্কুলে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীটির জন্য যেমন বইটি প্রয়োজনীয় তেমনি আধো আধো কথা বলতে শেখা ছোট্ট সোনামণির জন্যও এই বইটি কার্যকর। সহজ-সরল ও মজার অন্তমিলের ফলে খুব সহজেই বাচ্চারা এ ছড়াগুলো মুখস্থ করে ফেলতে পারবে এবং একই সাথে তাদের বর্ণমালাও শেখা হয়ে যাবে। বর্ণমালা শেখা কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। বলতে পারা, চিনতে পারা এবং লিখতে পারার দক্ষতা কিন্তু এক দিনেই রপ্ত করা যায় না। শিশুরা যা সহজে দেখলে চিনতে পারে সেসব বস্তুর সাথে যখন এই বর্ণমালার মিল করতে পারে তারা দ্রæত তখন বর্ণমালা আত্মস্থ করতে পারে। ঙ গেলে ব্যাঙের সাথে কচুপাতার ছাতাতে চ করে চড়–ইভাতি খেতের আলের মাথাতে। ধ বর্ণের ছড়াটি একটু ব্যতিক্রম। এখানে শুধু ধ বর্ণ দিয়েই ছড়া তৈরি হয়েছে। যেমন― ধ-এ ধনুক হাতে নিয়ে করতে যাব শিকার এ জীবনের পদে পদে আছে অনেক শিখার। এ ছাড়াও ব্যতিক্রম দেখা যায় ং, ঃ এবং ঁতেও― ং-এ রং লাগে ঃ-তে দুঃখ ভাগে। ঁ-চাঁদে হাসে দেশকে সবাই ভালোবাসে। ২৪ পৃষ্ঠার এ বইটিতে শেষ ২৩ ও ২৪ পৃষ্ঠা স্বরবর্ণ, স্বরচিহ্নের পরিচয় ও ব্যঞ্জনবর্ণগুলো একত্রে দেওয়া হয়েছে। এতে সহজেই ছড়া পাঠের পরে আবার বর্ণমালাগুলো এককভাবে পড়তে পারবে। আপনার বাচ্চাকে সহজ ও সঠিক পদ্ধতিতে বর্ণমালার পাঠ দিতে এ বইটি হতে পারে প্রথম পছন্দের।
রব্বানী চৌধুরী ছড়া সাধনায় এক নিরলস শব্দবাহু। নতুন নতুন ছন্দ ও অন্ত্যমিলের এক কীর্তিমান কাণ্ডারি । তার ছড়া সত্যের আলাে ছড়ায়। তাঁর ছড়া মানবতার অমােঘবাণী। তাঁর ছড়া মানুষকে মানুষ হওয়ার মন্ত্র দেয়। তাঁর ছড়া নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেকেই গবেষণা করছেন। রব্বানী চৌধুরী নীতি শিক্ষার ছড়ার জনক। ‘ছড়ায় ছড়ায় নীতিকথা’ বাংলাসাহিত্যে প্রথম একক নীতি কথার ছড়া। এ পর্যন্ত নীতি কথার ছড়া রচনায় এত ছড়া ও ছড়ার বই কেউ লিখতে পারেননি। তিনি নীতি কথার ছড়ার বই রচনায় নতুন জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। এখন তাঁর পথ অনেকেই অনুসরণ করছেন। আমাদের প্রকাশনী থেকে রব্বানী চৌধুরীর ‘সুনীতির ছড়া’, ‘নীতির মিঠাই’, ‘ছড়াগল্পে নীতিকথা’ প্রভৃতি শিশুদের মানস গঠনে বিশাল ভূমিকা পালন করবে। কবি বন্দে আলী মিয়া সত্যই বলেন, ‘রব্বানী চৌধুরীর ছড়া-কবিতাগুলি যুগ-যন্ত্রণার উজ্জ্বল পথিকৃৎ। কবিশ্রেষ্ঠ শামসুর রাহমান বলেন, 'ছড়ার বিশুদ্ধ সাহিত্যিক। ওপার বাংলা থেকে বলা হয়েছে, ‘ছড়াঋষি। এ যাবত পর্যন্ত লিখিত আশির অধিক ছড়াগ্রন্থের জনক রব্বানী চৌধুরী একালের ছড়া জগতে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। আমি তাঁর মঙ্গল কামনা করি। -দেওয়ান আজিজ