রব্বানী চৌধুরীর লেখা ‘ছড়ায় শিখি অংক’ একটি অভিনব বই বলা যায়। বইটি শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ। এ বইয়ের মাধ্যমে শিশুরা খুব সহজেই ১ থেকে ১০ সংখ্যা গুনতে শিখবে। প্রতিটি সংখ্যার সাথে রয়েছে ছড়া। যেমন― ১ একটি বিড়াল মিঁঞ ডাকে ২ দুইটি বিড়াল চায় ৩ তিনটি বিড়াল টেবিল চড়ে মাছের কাঁটা খায়। বিড়াল একটি গৃহপালিত প্রাণী। শহরে-গ্রামে প্রায় প্রত্যেক ঘরবাড়িতেই বিড়াল পোষা হয়। এমন একটি পরিচিত প্রাণীকে কেন্দ্র করেই ১ থেকে ১০ সংখ্যা নিয়ে ছড়া লিখেছেন রব্বানী চৌধুরী। শিশুরা মূলত শিখতে গেলে তাদের নানা রকম উপমা ও উদাহরণের মধ্য দিয়ে শেখাতে হয়। এতে তারা দ্রæত যেকোনো বিষয় রপ্ত করতে পারে। আমাদের স্কুলগুলোর পাঠ্য বইগুলোতে এত সহজ করে লেখা থাকে না। আসলে শিশুদের শেখানোর পদ্ধতি যে আলাদা তা মনে রাখতে হবে। শুধু মুখস্থ করেই অংক বা যেকোনো বিষয় আয়ত্ত করা সম্ভব হয় না। বুঝে এবং আনন্দের সাথে পাঠ নিতে পারলে সেই শিক্ষার অনেক সুফল পাওয়া যায়। ১০ দশটি বিড়াল টিভি দেখে শুনছে দেশের গান লাল সবুজের পতাকাটা বাংলাদেশের মান। এই ছড়াটির দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় যে শুধু অংক শেখাই না, এখানে দেশ এবং দেশের পতাকা নিয়েও রয়েছে কথা। বিড়াল যদিও এসব কিছুই বোঝে না কিন্তু কাল্পনিকভাবে তাদের শোনানো হচ্ছে গান। এই যে একটা কল্পনার জগৎ তৈরি হচ্ছে, এর মধ্য দিয়েই শিশুদের মনোজগৎ বিকশিত হয়। ১ ১ = ২ এক গেল খেলতে মাঠে আরেক গেল সাথে এক আর এক-দুই হয় ফুল তুলেছি হাতে। কী চমৎকারভাবে যোগ শেখানোর ছড়া। যখন সংখ্যা চিনতে শিখবে তখন শিশুদের যোগ শেখাতে হবে। আর এই যোগ শেখার জন্য এমন অভিনব পদ্ধতির ছড়া। এ ছাড়া সম্পূর্ণ রঙিন ছবি আঁকা আছে বইটির ছড়াগুলোর সাথে। এমন আনন্দ আর আকর্ষণীয় বই কিছুতেই যেন হাতছাড়া না হয়। বইটি শিশুশিক্ষার বিদ্যালয়গুলোতে আবশ্যকীয় পাঠ্য করা যেতে পারে। কেননা এত সহজ-সরল ও সুন্দরভাবে লেখা অংক শিক্ষার বই বাজারে খুব একটা নেই। উপহার হিসেবেও এটি একটি চমৎকার বই হবে।
রব্বানী চৌধুরী ছড়া সাধনায় এক নিরলস শব্দবাহু। নতুন নতুন ছন্দ ও অন্ত্যমিলের এক কীর্তিমান কাণ্ডারি । তার ছড়া সত্যের আলাে ছড়ায়। তাঁর ছড়া মানবতার অমােঘবাণী। তাঁর ছড়া মানুষকে মানুষ হওয়ার মন্ত্র দেয়। তাঁর ছড়া নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেকেই গবেষণা করছেন। রব্বানী চৌধুরী নীতি শিক্ষার ছড়ার জনক। ‘ছড়ায় ছড়ায় নীতিকথা’ বাংলাসাহিত্যে প্রথম একক নীতি কথার ছড়া। এ পর্যন্ত নীতি কথার ছড়া রচনায় এত ছড়া ও ছড়ার বই কেউ লিখতে পারেননি। তিনি নীতি কথার ছড়ার বই রচনায় নতুন জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। এখন তাঁর পথ অনেকেই অনুসরণ করছেন। আমাদের প্রকাশনী থেকে রব্বানী চৌধুরীর ‘সুনীতির ছড়া’, ‘নীতির মিঠাই’, ‘ছড়াগল্পে নীতিকথা’ প্রভৃতি শিশুদের মানস গঠনে বিশাল ভূমিকা পালন করবে। কবি বন্দে আলী মিয়া সত্যই বলেন, ‘রব্বানী চৌধুরীর ছড়া-কবিতাগুলি যুগ-যন্ত্রণার উজ্জ্বল পথিকৃৎ। কবিশ্রেষ্ঠ শামসুর রাহমান বলেন, 'ছড়ার বিশুদ্ধ সাহিত্যিক। ওপার বাংলা থেকে বলা হয়েছে, ‘ছড়াঋষি। এ যাবত পর্যন্ত লিখিত আশির অধিক ছড়াগ্রন্থের জনক রব্বানী চৌধুরী একালের ছড়া জগতে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। আমি তাঁর মঙ্গল কামনা করি। -দেওয়ান আজিজ