বাংলাদেশে খাস জমির রাজনৈতিক অর্থনীতি জমি ও জলায় দরিদ্রের অধিকার
খাস জমি এবং জলার শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনা, ভূমিহীন দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন, জমি এবং জলায় ভূমিহীনের দখলাধিকার এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট আইন ও তার প্রয়োগ কৃষি সংস্কারের প্রধান বিষয়গুলো নির্ধারণ করে। মোট ৩৩ লক্ষ একর পরিমাণ চিহ্নিত খাস জমির মধ্যে এযাবৎ একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র দরিদ্রদের মাঝে বণ্টিত হয়েছে, যারা জমি পাওয়া এবং দখলে রাখা সম্পর্কিত বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বেশিরভাগ খাস জমি (চিহ্নিত বা অচিহ্নিত) সমাজের ধনী ও প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে, যারা ক্ষমতা-কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশে মানবোন্নয়ন নিশ্চিত করতে কৃষি-ভূমিসংস্কারের বিকল্প নেই। এর বাস্তবায়নে খাস জমি এবং জলায় দরিদ্রদের মালিকানা এবং অভিগম্যতা প্রসারিত হওয়া উচিত। এটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বিষয়, যা শুধু জনগণের অংশগ্রহণমূলক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হতে পারে।
লেখক: আবুল বারকাত, পিএইচডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক। ড. বারাকাত মানব উন্নয়নের রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিশেষ করে, ভূমি, অর্পিত সম্পত্তি এবং মানবাধিকার, সংখ্যালঘু স¤প্রদায়, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, স্বাস্থ্য, দারিদ্র, জনসংখ্যা, শাসন এবং আইনি বিষয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে একজন প্রখ্যাত অভিনিবিষ্ট গবেষক। মানব বঞ্চনা এবং মানব উন্নয়নের উপর আবুল বারকাতের তিন শতাধিক গবেষণা সমীক্ষা এবং প্রকাশনার কৃতিত্ব রয়েছে। তাঁর রচিত“An Inquiry into Causes and Consequences of Deprivation of Hindu Minorities in Bangladesh through the Vested Property Act” (প্রকাশকাল২০০০) শীর্ষক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থের প্রধান রচয়িতা। এ গ্রন্থটি ছিল অমানবিক অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিলকরণে সহায়ক। এছাড়াও, “Development as Conscientization : The Case of Nijera Kori in Bangladesh.” “Political Economy of Land Litigation in Bangladesh : A Case of Colossal National Wastage” (ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় প্রকাশিত), “Political Economy of Char Land in Bangladesh”, “Deprivation of Hindo Minority in Bangladesh : Living with Vested Property Act” (ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় প্রকাশিত) শীর্ষক পথিকৃৎ গ্রন্থগুলোর প্ে বিশ্বাস করেন-মানব উন্নয়ন হলো স্বাধীনতা ও চেতনায়ন মধ্যস্থতাকারী একটি প্রক্রিয়া। তাই তিনি মানব উন্নয়নের নৈতিক এবং আদর্শিক দিকের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। অর্থনৈতিক মুক্তিসহ মানুষের সার্বিক মুক্তির স্বপ্ন দেখা মানুষ আবুল বারকাত মানব উন্নয়নের উপায় এবং পরিণতি হিসেবে প্রকৃত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অধ্যাপক আবুল বারকাত চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সক্রিয়। শফিক-উজ-জামান, পিএইচডি, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ। ড. জামান সক্রিয়ভাবে উন্নয়ন গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ড. জামানের চিন্তা এবং লেখনী সর্বপ্রকার অস্বাধীনতার উৎসগুলো অপসারণের পক্ষে বলিষ্ঠ যুক্তিভিত্তিক সংগ্রামের চেতনায় উদ্দীপ্ত। তিনি ÒAn Inquiry into Causes and Consequences of Deprivation of Hindu Minorities in Bangladesh through the Vested Property”, Political Economy of The Vested Property Act in Rural Bangladesh” শীর্ষক গ্রন্থগুলোর সহ-গ্রন্থকার। সেলিম রায়হান, পিএইচডি, সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ। জনাব রায়হান মানব উন্নয়ন এবং কল্যাণ অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন চিন্তায় মৌলিক পরিবর্তন জরুরি। এ পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে কৃষি-জমি-জলা সংস্কার এবং প্রকৃত দরিদ্র মানুষের মধ্যে ব্যাপক খাস জমির সুষ্ঠু বণ্টনের মধ্য দিয়ে। কারণ জমি-জলা মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উৎস; কৃষিপ্রধান দেশে জমিই প্রধান সম্পদ এবং চালিকা শক্তি। কৃষি-জমি-জলা সংস্কারই উন্নয়নে নতুন এক মূল ধারা সংযোজন করতে পারে। দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাসজমির সুষ্ঠু বন্টন (ব্যক্তি এবং / অথবা যৌথ চাষ) দেশে নি:সন্দেহে দারিদ্র কমিয়ে আনতে সক্ষম। বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চারটি ‘জ’ এর অর্থাৎ জমি-জলা-জঙ্গল-জনমানুষ এর সমম্বিত উন্নয়ন ধারণার স্বীকৃতি অপরিহার্য। এ ধারণাটিকেই হতে হবে দেশের মাটি থেকে উত্থিত উন্নয়ন দর্শনের প্রকৃত ভিত্তি। - আবুল বারকাত
Title
বাংলাদেশে খাস জমির রাজনৈতিক অর্থনীতি : জমি ও জলাদার দরিদ্রের অধিকার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। দর্শন, নীতিশাস্ত্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রাজনীতি, ইতিহাস, অর্থশাস্ত্র, ধর্মশাস্ত্র, সমাজবিজ্ঞান, প্রকৃতিবিজ্ঞান – যা কিছু প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মানবসমাজ বিবর্তন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞানে সহায়ক সে সবের বিচার-বিশ্লেষণ তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। “গণমানুষের অর্থনীতিবিদ” খ্যাত সমাজ বিশ্লেষক ড. আবুল বারকাত গত ত্রিশ বছরে পাঁচ শ-এর বেশি গবেষণাগ্রন্থ, প্রবন্ধ, অভিসন্দর্ভ, রিপোর্ট, লোকবক্তৃতা রচনা করেছেন। এসবের মধ্যে মৌলিকত্বে অনন্য কয়েকটি বিষয় হলো: অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, রেন্ট সিকিং উদ্ভূত লুণ্ঠন ও পরজীবীবৃত্তির অর্থনীতি ও রাজনীতি, কালো টাকা, মৌলবাদ ও মৌলবাদী জঙ্গিত্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি, উৎপাদন পদ্ধতি, খাসজমি-জলা, ভূমি মামলা, ভূমি আইন, নারীর ক্ষমতায়ন, আদিবাসী মানুষসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, শত্রু ও অর্পিত সম্পত্তি আইনের রাজনৈতিক অর্থনীতি, সচেতনায়নই উন্নয়ন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মাদ্রাসা শিক্ষার রাজনৈতিক অর্থনীতি, বঙ্গবন্ধুর দর্শনভাবনা-সমতা- সাম্রাজ্যবাদ, শিশু দারিদ্র্য ও শিশু বঞ্চনা, অর্থনীতিশাস্ত্রে ‘দর্শনের দারিদ্র্য’, জনস্বাস্থ্য, জেনোমিক মেডিসিন, আর্সেনিকমুক্ত পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, স্থানীয় শাসন ও বিকেন্দ্রায়নের রাজনীতি ও অর্থনীতি, সুশীল সমাজের রাজনৈতিক অর্থনীতি, বৈদেশিক ঋণ অনুদানের রাজনৈতিক অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্বব্যবস্থা।