"মধ্যবিত্তের বিকাশ ও ভোগবাদের উত্থান" বইটির প্ররহম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ আলফ্রেড মার্শাল অর্থনীতির সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে লিখেছেন "Economics is the study of mankind in the ordinary business of life"| জ্ঞানভিত্তিক সমাজে জ্ঞানের অভাবিত বিস্ফোরণের ফলে গণিত ও সংখ্যাতত্তে আকীর্ণ অর্থনীতিতে সাধারণ মানুষ ও তাদের আটপৌরে জীবন হারিয়ে গেছে। এই প্রেক্ষিত থেকে মামুন রশীদের 'মধ্যবিত্তের বিকাশ ও ভােগবাদের উত্থান’ একটি সাহসী ও ব্যতিক্রমধর্মী রচনা। 'মা যে জননী কান্দে' প্রবন্ধটিতে ব্যক্ত হয়েছে বিশ্বায়নের যুগের অভিবাসী সন্তানদের মায়ের আর্তনাদ। গ্রন্থটিতে রয়েছে ছাব্বিশটি প্রবন্ধ। প্রতিটি প্রবন্ধেই বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলােচনা রয়েছে। প্রতিটি প্রবন্ধই লেখা হয়েছে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে এবং সাধারণ মানুষের ভাষায়। বাঙলা ভাষায় অর্থনীতি চর্চার এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। গ্রন্থকার যেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন তেমনি তার সমস্যার কথাও লিখেছেন। লেখক আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে একদিকে যেমন দারিদ্র হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে কোটিপতির বিকাশ ঘটছে। একটি প্রবন্ধের শিরােনাম হলাে ‘অর্থনীতির বারােটা, গণতন্ত্রের তেরােটা। বাংলাদেশের সমস্যা এত জটিল যে লেখক নিজেও অনেকটা হতাশ। এ মনােভাব ব্যক্ত হয়েছে 'এ খাঁচা ভাঙবাে আমি কেমন করে?' প্রবন্ধে। তবু গণতন্ত্রে আস্থা তার অটল ও অনঢ়। তার চূড়ান্ত বক্তব্য হলাে: “উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পারস্পরিক সাংঘর্ষিক নয়। ইতিহাস প্রমাণ করেছে ‘গণতন্ত্রের পথেই অর্থনীতির উন্নয়ন। আমরা পছন্দ করি আর না করি, গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলবেই”। লেখকের সব পরামর্শই হয়তাে সকলের কাছে গ্রহণযােগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু তাঁর বক্তব্যসমূহ পাঠকের অর্থনীতি নিয়ে অবশ্যই নতুন চিন্তার খােরাক জোগাবে।
মামুন রশীদের জন্ম ১৯৬১ সালে । পিতার সরকারি চাকুরির কারণে ঘুরেছেন বাংলাদেশের অনেক জেলায় । শৈশব কেটেছে সিলেটে, কৈশোর নোয়াখালীতে । পড়াশোনা করেছেন সিলেট জিলা স্কুল, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের হেনলি ম্যানেজমেন্ট কলেজে । স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসনে । পরবর্তীতে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল, কেলগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট, যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিজনেস স্কুল, ক্রেনফিল্ড স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট এবং ভারতে ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেস -এ ।লেখালেখির শুরু সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, স্কুল এবং কলেজের দেয়ালপত্রিকা এবং সাময়িকীতে । নিয়মিত পত্রপত্রিকায় সত্তর দশকের শেষ দিকে । প্রকাশিত লেখার সংখ্যা সাতশ'র অধিক । প্রিয় বিষয় প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন, বাজার সংস্কার ও উন্নয়ন । পেশাগত জীবনের শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে আশির দশকের শুরুতে । ব্যাংকিংয়ের সাথে জড়িত হয়েছেন চুরাশির শেষ দিকে । প্রায় পঁচিশ বছর কাজ করেছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকে দেশে ও বিদেশে । বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় বহুল সুখ্যাতি অর্জন করেছেন । পাশাপাশি ব্যবসায় প্রশাসনের একজন খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসাবেও সম্পৃক্ত রয়েছেন গেল প্রায় তেইশ বছর যাবৎ । ব্যক্তিগত জীবনে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুনের স্বামী এবং ফাহমিদ রশীদের পিতা । দিনের শুরু প্রত্যুষে আর শেষ গভীর রাতে । ছুটে চলেছেন নিজ প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাফল্যের কাজে । সমাজ ও অর্থনীতির পরিবর্তনকামী অনেক সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ।