বাংলাদেশের ভূমি-মামলার রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশাল এক জাতীয় অপচয়ের কথকতা
মামলাকবলিত পরিবারে ভূমি-মামলা এক অভিশাপ। বছরে ১৪ লাখ মুলতবী মামলাসহ ২৮ লাখ চলমান ভূমি মামলায় আদালতসমূহ ভারগ্রস্ত। এ বিশাল জাতীয় অপচয়ের কারণ : প্রায় ১২ কোটি মানুষ ভূমি-মামলা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত; ভোগান্তি-বছর প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ বছরের সমতুল; মামলাধীন জমির মোট পরিমাণ ২৩.৫ লাখ একর (মোট জমির এক চতুর্থাংশ); মামলা মোকাবিলার জন্য ব্যয়িত অর্থের পুঞ্জীভূত পরিমাণ দেশের বাৎসরিক উন্নয়ন বাজেটের ব্যয় অপেক্ষা বেশি; মামলাধীন পরিবারগুলোর সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির মোট পরিমাণ বছরে ১১.৫১৯ কোটি টাকা; এবং মামলা সংশ্লিষ্ট আকম্মিক খরচের বাৎসরিক পরিমাণ ২৪,৮৬০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫০ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের ঘুষ। যাহোক প্রকৃত ক্ষতি হবে উল্লিখিত ক্ষতির অঙ্কের চেয়ে অনেক বেশি। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতিতে অন্তর্ভুক্ত হবে সময়ের সুযোগ ব্যয়, বাধ্যতাজনিত কারণে জীবনযাত্রার অবক্ষয়ের ব্যয়, শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি-সহ বহু বাহ্যিক ব্যয়াদি, পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ার সুযোগ ব্যয়, সামাজিক নিপীড়ন এবং মানুষে মানুষে সম্পর্ক অবনতির মূল্য, দুনীতির মূল্য এবং দুর্বৃত্তায়িত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো পদ্ধতির মধ্যে আইন ও শাসন পরিস্থিতি প্রশাসনিক কাঠামো পদ্ধতির মধ্যে আইন ও শাসন পরিস্থিতি অবনতির মূল্য। ভূমি-মামলা মামলাকবলিত পরিবারগুলোর নিঃস্বকরণ ও বঞ্চনা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। এটা উভয় পক্ষের জন্য এক ক্ষতিকর যুদ্ধ। যে যুদ্ধে কোনো পক্ষই জেতেন না। এটা বিচার বিভাগ, পুলিশ, ভূমি শাসন ও ব্যবস্থাপনা, উকিল, স্থানীয় প্রভাবশালী, টাউট এবং এদের মতো আরো অনেকসহ কেবল দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের জন্য জয়-জয়কার পরিস্থিতি। এ বিশাল অপচয় প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন এ বিস্ময়কর বিপুল সংখ্যক অপ্রয়োজনীয় ভূমি মামলা হ্রাসকরা এবং ভূমি সংশ্লিষ্ট বিবাদ, সংঘাত ও মামলায় সম্পৃক্ত পরিবারসমূহের অতিশয় বঞ্চনা ও নিঃস্বকরণের ব্যাপ্তি কমিয়ে আনা। এ প্রেক্ষিতে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা; বিচার ব্যবস্থা এবং ভূমি-প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে সংস্কার আনা; তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম আদালতসমূহ ও সালিশের মাধ্যমে বিবাদ মীমাংসাকে উৎসাহিত করা; খাস জমি ও জলায় দরিদ্র জনসাধারণের আইনী অধিকার নিশ্চিত করা; এবং সুশীল সমাজকে এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার জন্য কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন জরুরী। ইত্যকার বিষয় নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যানসহ বিস্তারিত আলোচনা সমৃদ্ধ এই বই।
লেখক:ড. আবুল বারকাত বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। ড. বারকাত মানব উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশেষ করে, ভূমি-দারিদ্র ও উন্নয়ন সম্পর্ক, মানবাধিকার হিসেবে উন্নয়ন, সংবিধান ও মানব উন্নয়ন, উন্নয়নে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী মানুষের অধিকার, শহরায়ন ও বস্তিয়ায়ন, অর্থনীতি ও রাজনীতির দুর্বত্তায়ন, দুর্নীতি ও কালো টাকা, শাসন-সুশাসন, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন ও দারিদ্র, উন্নয়নে লিঙ্গভেদ, জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রসমূহে একজন খ্যাতনামা গবেষক। ড. বারাকাত-এর রয়েছে ভূমি অধিকার, দারিদ্র, মানব বঞ্চনা ও মানব উন্নয়নের উপর আড়াই শতাধিক গবেষণা আলেখ্য ও প্রকাশনার কৃতিত্ব। ভূমি অধিকার ও দারিদ্র সম্পর্কিত তিনটি পথিকৃত গ্রন্থের তিনি প্রধান গ্রন্থকার : “An Inquiry into Causes and Consequences of Deprivation of Hindu Minorities in Bangladesh through the Vested Property Act” (২০০১ সনে প্রকাশিত) যা কিনা এ অমানবিক অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিলকরণে সহায়ক ছিল; “Political Economy of Khas Land in Bangladesh” (২০০১ সনে প্রকাশিত), গ্রন্থটি ছিল বাংলাদেশে ভূমি সংস্কারের সমগ্র বিষয়টি পুনরুত্থাপনে সহায়ক; এবং “Poverty and Access to Land in Bangladesh” এটি দরিদ্র জনগণের (আদিবাসী জনগণ ও মহিলাসহ) ভূমি এবং জলায় অধিগম্যতার উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়াদি তুলে ধরে। মানবাধিকার ও স্বাধীনতা মধ্যস্থ একটি প্রক্রিয়াহিসেবে মানব উন্নয়নকে ড. বারকাত গভীরভাবে বিশ্বাস করেন আর তাই তিনি মানব উন্নয়নের নৈতিক ও আদর্শগত দিকসমূহের উপর গুরুত্ব দেন। মানব উন্নয়নের উপায় ও চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে সত্যিকার স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করার জন্য তিনি সক্রিয়ভাবে সুশীল সমাজের কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র বর্তমান নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (২০০৪-২০০৬)।
প্রশান্ত কুমার রায় বাংলাদেশ সরকারের একজন উপসচিব। একজন প্রশাসনিক ক্যাডার হিসেবে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছেন এবং গ্রামীণ বাংলাদেশে ভূমি মামলার বাস্তব কারণ ও ফলাফলসমেত যথেষ্ট মাত্রায় মাঠভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একজন পরিচালক। তিনি ভূমি, দারিদ্র ও মানব উন্নয়ন সম্পর্কে প্রবন্ধাবলি প্রকাশ করেছেন।
Title
বাংলাদেশের ভূমি-মামলার রাজনৈতিক অর্থনীতি : বিশাল এক জাতীয় অপচয়ের কথকতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। দর্শন, নীতিশাস্ত্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রাজনীতি, ইতিহাস, অর্থশাস্ত্র, ধর্মশাস্ত্র, সমাজবিজ্ঞান, প্রকৃতিবিজ্ঞান – যা কিছু প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মানবসমাজ বিবর্তন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞানে সহায়ক সে সবের বিচার-বিশ্লেষণ তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। “গণমানুষের অর্থনীতিবিদ” খ্যাত সমাজ বিশ্লেষক ড. আবুল বারকাত গত ত্রিশ বছরে পাঁচ শ-এর বেশি গবেষণাগ্রন্থ, প্রবন্ধ, অভিসন্দর্ভ, রিপোর্ট, লোকবক্তৃতা রচনা করেছেন। এসবের মধ্যে মৌলিকত্বে অনন্য কয়েকটি বিষয় হলো: অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, রেন্ট সিকিং উদ্ভূত লুণ্ঠন ও পরজীবীবৃত্তির অর্থনীতি ও রাজনীতি, কালো টাকা, মৌলবাদ ও মৌলবাদী জঙ্গিত্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি, উৎপাদন পদ্ধতি, খাসজমি-জলা, ভূমি মামলা, ভূমি আইন, নারীর ক্ষমতায়ন, আদিবাসী মানুষসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, শত্রু ও অর্পিত সম্পত্তি আইনের রাজনৈতিক অর্থনীতি, সচেতনায়নই উন্নয়ন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মাদ্রাসা শিক্ষার রাজনৈতিক অর্থনীতি, বঙ্গবন্ধুর দর্শনভাবনা-সমতা- সাম্রাজ্যবাদ, শিশু দারিদ্র্য ও শিশু বঞ্চনা, অর্থনীতিশাস্ত্রে ‘দর্শনের দারিদ্র্য’, জনস্বাস্থ্য, জেনোমিক মেডিসিন, আর্সেনিকমুক্ত পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, স্থানীয় শাসন ও বিকেন্দ্রায়নের রাজনীতি ও অর্থনীতি, সুশীল সমাজের রাজনৈতিক অর্থনীতি, বৈদেশিক ঋণ অনুদানের রাজনৈতিক অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্বব্যবস্থা।