"বেলা অবেলা সারাবেলা" ফ্ল্যাপে লেখা কথা: বেলা অবেলা সারাবেলা আসাদুজ্জামান নূর-এর উপস্থাপনায় দেশ টেলিভিশনে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানের লেখ্যরূপ। গৃহিত সাক্ষাৎকারের অনেক অংশই টেলিভিশনে সম্প্রচার হয়নি। নির্বাচিত সাক্ষাৎকারগুলাের সম্পূর্ণটুকু শ্ৰুতিলিখনের মাধ্যমে পুস্তকাকারে এখানে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের সমাজের আলােকিত ব্যক্তিত্ব যাঁরা তাদের কর্ম ও সাফল্য দিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে গেছেন একটি মর্যাদার আসনে; স্ব স্ব অঙ্গনে তাদের অর্জন তাঁদেরকে নিয়ে গেছে এক ঈর্ষণীয় উচ্চতায়। তাদের ভাবনা-চিন্তা, অর্জন-সাফল্য, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, তুপ্তি-অতৃপ্তি, ভালাে লাগা-দুঃখবােধ তথা তাদের জীবনের পথচলা- বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় ও শিক্ষণীয়। এই সকল প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাদের সুখ-দুঃখের, আবেগ-অনুভবের কথা আসাদুজ্জামান নূর সযত্নে প্রশ্ন করে জেনে নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথিতযশা প্রবীণ ব্যক্তিদের সাফল্যের নেপথ্য কাহিনী প্রবীণতের ক্রমানুসারে এখানে সংকলিত হয়েছে। কথােপকথনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই অনুষ্ঠানগুলাে কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, আরাে বেশি মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার ভাবনা থেকে একই সঙ্গে বই ও ডিভিডি আকারে প্রকাশ করার প্রয়াস। পড়ার সাথে সাথে পাঠকবর্গ দর্শক হয়ে সম্পূর্ণ সাক্ষাৎরগুলাে দেখতে ও শুনতে পারবেন।
আসাদুজ্জামান নূর জন্ম ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায়। পিতা আবু নাজেম মােহাম্মদ আলী এবং মাতা আমিনা বেগম। তিনি ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে নীলফামারী মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্র জীবন থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে ওতপ্রােতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ দেশের নাট্য আন্দোলনে অন্যতম পথিকৃত তিনি। ১৯৭২ সালে নাগরিক নাট্যদলে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে থিয়েটার জগতে তার পদার্পণ। এ পর্যন্ত ১৫টি মঞ্চ নাটকে তিনি ৬০০ এর বেশি বার অভিনয় করেছেন। তিনি নাটকের নির্দেশনাও দিয়েছেন। মঞ্চ ও টেলিভিশনে তার লেখা বেশকিছু নাটক সমাদৃত হয়েছে। কর্মজীবন শুরু ১৯৭২ সালে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক চিত্রালীর মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে যােগ দেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। ছাত্র জীবন থেকে সম্পৃক্ত হন রাজনীতির সাথে। ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন-এ যােগ দেন। ১৯৬৫ সালে নীলফামারী কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে যােগ দেন মুক্তিযুদ্ধে এবং বিভিন্ন সময় এরশাদ বিরােধী আন্দোলন, শহীদ জননী। জাহানারা ইমাম এর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আন্দোলনসহ নানা আন্দোলন ও সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনােনীত প্রার্থী হিসেবে নীলফামারী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব। পালন করছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর-এর ট্রাস্টি বাের্ডের সদস্য, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এর সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-এর সদস্য এবং বাংলাদেশ-রাশিয়া। ফ্রেন্ডশিপ সােসাইটির সাধারণ সম্পাদক। সহধর্মিনী ডা. শাহীন আক্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান এর জনক।