“হঠাৎ তোমার জন্য" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বেশ কিছুক্ষণ নিপা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল । মিটিমিটি হাসছে ও। হঠাৎ চেহারাটা ম্লান করে বলল, সুমার সঙ্গে তােমার অ্যাফেয়ার ছিল আড়াই বছর, আর আমার সঙ্গে তােমার বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর। সুমা তােমাকে আড়াই বছরে কী দিয়েছে, যা আমি তােমাকে তিন বছরে দিতে পারিনি? এখনাে তােমার মাঝে সুমা বিদ্যমান। আমি তাই ওকে একটু সরাসরি দেখতে চাই, দেখতে চাই কী আছে তােমার ওই মায়াবতীর মাঝে, যা আমার মাঝে নেই।' কথাটা শেষ করেই নিপা হাসতে থাকে পাগলের মতাে। রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন বদি ভাই। কিছু দূর এসে একটা বাদামওয়ালাকে দেখে দু'টাকার বাদাম কিনে বলেন, একটা কিছু করা দরকার রনজু । সবাই কিছু না কিছু করে। এই যেমন ধরাে এই ছেলেটাও বাদাম বেচে সারাদিন। কিছু একটা না করলে নিজেকে ঠিক মানুষ মনে হয় না। মনে হয় রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া ছাগল। সারাদিন এটা-ওটা মুখে দাও, চাবাও, আর যেখানে খুশি সেখানে ঘুরে বেড়াও। বদি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি, তাকে দিব্যি এখন ছাগলের মতােই লাগছে। যূথী বলল, এই পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়তে পারি কিংবা যার যার বাসায় গিয়ে দুধ আর কলা দিয়ে ভাত খেয়ে তৃপ্তির একটা ভেঁকুর তুলতে পারি। তারপর নাক ডেকে ঘুমাতে পারি যার যার নরম বিছানায় । না, আমরা এ দুটোর একটাও করব না।' সৌম্য চোখ-মুখ শক্ত করে বলল, 'আমরা আমাদের মতাে চলব, আমাদের কাজ করব, যেমনটা শুরু করেছিলাম আমাদের যার যার পরিবারে, এখন শুরু করব সারাদেশে। প্রমিজ। ভয়ঙ্কর একটা কাজ করব আমি । আজ রাতেই, ঠিক একটু পরেই। পৃথিবীর আর কোনাে মেয়ে এ রকম কোনাে কাজ করেছে কি না আমার জানা নেই, শুনিওনি কখনাে। কিন্তু আমি করব । কোনাে বাধাই আজ আমাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না, কোনাে ভয়ই পারবে না আজ আমাকে দ্বিধায় ফেলতে। কাজটা ভয়ঙ্কর, তবুও।
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।