বাংলাদেশ উন্নয়ন বিতর্ক নীতি সংলাপের আলোকে বর্তমান গ্রন্থটি বিগত কয়েক বৎসর যাবত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বেশ কিছু সংলাপের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুতকৃত সংলাপ প্রতিবেদনসমূহের সংকলিত রূপ। সিপিডি’র সংলাপ প্রক্রিয়াকে আরো ব্যাপকতর এবং সংলাপের ফলাফলকে আরো বিস্তৃত করার লক্ষ্যে এ সংকলনটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিপিডি’র সংলাপসমূহে অংশগ্রহণকারী সরকারি র বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক র পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা, উন্নয়ন অংশীদার, বিশেষজ্ঞমন্ডলী, তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মীসহ বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের মধ্যে তত্ত্ব, তথ্য, দৃষ্টিভঙ্গি র অভিজ্ঞতার যে ব্যাপক বিনিময় হয়ে থাকে তা এই সংকলনে প্রতিফলিত হয়েছে। সংলাপ সংকলনের ১ম খণ্ড যে প্রতিবেদনসমূহ উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলি মোট তিনটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। প্রথম অধ্যায়ের প্রতিপাদ্য বিষয় জ্বালানী, বিদ্যুৎ র যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এ অধ্যায়ে মূলত নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ আলোচিত হয়েছে : (ক) বাংলাদেশের জ্বালানী র খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার; (খ) বাংলাদেশে বিরাজমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি, এবং বিদ্যুৎখাতের সমস্যাসমূহ উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি-সংস্কার র (গ) ট্রান্স-এশিয়ান রেলরয়ে নেটরয়ার্ক এবং এশিয়ায় সমন্বিত স্থল পরিবহন ব্যবস্থায় বাংলাদেশের ভূমিকা। দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রতিপাদ্য বিষয় বিশ্ব বাণিজ্য, আঞ্চলিক সহযোগিতা র বাংলাদেশ। এ অধ্যায়ে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর সংলাপ প্রতিবেদনসমূহ তুলে ধরা হয়েছে : (ক) আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্যাংকে ক্ষুদ্র র বৃহৎ সদস্য দেশসমূহের ভূমিকা; (খ) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের এজেন্ডা র (গ) বাংলাদেশের সঙ্গে সার্কভূক্ত, দক্ষিণ-পর্ব এশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ সমূহের উন্নয়ন সম্পর্ক। তৃতীয় অধ্যায়ের প্রতিপাদ্য বিষয় বাংলাদেশের উন্নয়ন-সম্পর্কিত কতিপয় প্রাসঙ্গিক ইস্যু। এ অধ্যায়ে নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর সংলাপ প্রতিবেদনসমূহ স্থান পেয়েছে: (ক) বাংলাদেশের বৈদেশিক সাহায্য; (খ) বাংলাদেশে বিনিয়োগ কর্মকা- ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিসংস্কার র (গ) চিংড়ি চাষ র টেচকসই উন্নয়ন। আশা করা যায়, পাঠকবৃন্দ সিপিডি’র প্রতিবেদনসমূহ এবং সংলাপের প্রারম্ভিক উপস্থাপনা হিসাবে প্রস্তুতকৃত গবেষণামূলক প্রতিবেদনগুলো থেকে উপকৃত হবেন এবং গবেষক, উন্নয়ন কর্মী, শিক্ষার্থীসহ আগ্রহী পাঠকের কাছে সংকলনগ্রন্থে উপস্থাপিত বিবিধ আলোচনার সার-সংক্ষেপ তথ্য এবং বিশ্লেষণসমূহ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হবে।
জন্ম ১৯৩৫ সালের ১২ মার্চ কলকাতায়। তাঁর বাবার নাম কে.এফ.সোবহান। তিনি ছিলেন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রদূত। তাঁর মায়ের নাম হাসমত আরা বেগম। তিনি দার্জিলিং-এর সেন্ট পলস্ স্কুলে এবং লাহোরের অ্যাচিসন কলেজ থেকে পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়থেকে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। রেহমান সোবহান ১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে দেশে ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন রেহমান সোবহান। অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদমর্যাদায়); শিল্প, বিদ্যুত্ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ এবং অবকাঠামো বিভাগে (১৯৭২-৭৪) যথাক্রমে চেয়ারম্যান, গবেষণা পরিচালক, মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বিআইডিএস- এ এমিরিটাস ফেলো হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও কুইন এলিজাবেথ হাউজে ১৯৭৬-১৯৭৯ পর্যন্ত ভিজিটিং ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট এর এ্যাডভাইজরী কাউন্সিল (ক্যবিনেট মিনিস্টার এর পদমর্যাদায়), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (১৯৯১) সদস্য ছিলেন। তিনি সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর পলিসি ষ্টাডিজ-এ (২০০১-২০০৫) নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি ১৯৯৪- ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি বিআইডিএসের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। রেহমান সোবহানের প্রকাশিত মনোগ্রাফের সংখ্যা ৪২ টি। এছাড়া তাঁর বিভিন্ন জার্নালে প্রায় ২০০ এর উপরে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কাজের প্রধান বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইয়ুব খানের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর রাজনৈতিক সম্পর্ক, মধ্যবর্তী শাসন পদ্ধতিতে সার্বজনীন সাহসী উদ্যোগের ভূমিকা, বৈদেশিক নির্ভরশীলতার সংকট, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা, কৃষিজ সংস্কার, সমন্বয় নীতি সংস্করণের সমালোচনামূলক নিবন্ধ, দুঃশাসনের ব্যবচ্ছেদ এবং সর্বশেষে দারিদ্র বিমোচনের কৌশল।