১ম ফ্ল্যাপের লেখা তুমি বললে, আজ পূর্ণিমা। আজ চন্দ্রগ্রহণ। আজ ব্লাডমুন। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, এমন সময়গুলো আমরা কবে একসঙ্গে কাটাব নার্গিস? আমার পরীক্ষা কি এখনো শেষ হয়নি? তুমি বললে, একই সঙ্গে সুপারমুন ও পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা এবার ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর ঘটছে। এটা আবার দেখা যাবে ২০৩৩ সালে। তার মানে আমাকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? তখন তো আমার বয়স হবে ৪৮ বছর। আরে না। এতদিন অপেক্ষা করতে হবে কেন? কিন্তু আমি অপেক্ষা করেছি। তবু আমার পরীক্ষা শেষ হয়নি। ওই যে বললাম, সৃষ্টিকর্তা তোমাদের কোন মাটি দিয়ে বানিয়েছেন? আমি বলছি তোমার সঙ্গে ঘুমোবো আজ, আর তুমি বলছ তুমি নাকি আজ আত্মহত্যা করবে। আরে, আত্মহত্যা করা কি চাট্টিখানি কথা? কত প্রস্তুতি নিতে হয়, কত পরিকল্পনা করতে হয়। তুমি কি এই দুই বছর ধরে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিয়েছ? হতেও পারে। তোমাকে বিশ্বাস নেই। তোমার জন্মতারিখ ৭ , বিয়ে করবে বলেছ ৭-এ, এখন তাহলে তোমার মৃত্যুও হবে ৭ তারিখ? হায় খোদা, আমি এখন কী করব? ধুর, আত্মহত্যাই যদি করবে, লাল শাড়ি পরে এসেছ কেন? মেহেদি কেন মাখলে? আলতা? আর তোমার চোখে এটা কেমন দৃষ্টি? আনত, সলজ্জ, মদির। তোমার চোখ-মুখ-ঠোঁট, তোমার অঙ্গভঙ্গি, তোমার নাক-কানÑসবই তো বিয়ে হতে যাওয়া মেয়েদের মতো। তাহলে? তুমি বললে, ‘তাহলে কী? আজ আমার বিয়ে, তাই।’ তাহলে আত্মহত্যার কথা বলছ যে? বলছি। আমার বিয়েটাই আমার আত্মহত্যা।
২য় ফ্ল্যাপের লেখা মাইনুল এইচ সিরাজীর জন্ম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর গ্রামে। লেখাপড়া করেছেন সিরাজপুর হাই স্কুল, সরকারি মুজিব কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবারের ছোট ছেলে বলে তিনি দুরন্ত, পিতা আনোয়ার উল¬াহ সিরাজী, মা মনোয়ারা বেগম ও ভাই-বোনেরা সমঝদার পাঠক বলে তিনি সৃজনশীল। আমাদের পত্রিকাগুলোর পাঠক-পাতা যখন তুমুল জনপ্রিয় ছিল, মাইনুল এইচ সিরাজী সে সময় ছিলেন হুলস্থুল জনপ্রিয়। ভোরের কাগজ পাঠক ফোরাম থেকে সেরা জনপ্রিয় লেখক, প্রথম আলো বন্ধুসভা থেকে সেরা গল্প লেখক ইত্যাদি খেতাবও পেয়েছেন। সরল চিন্তা আর রসবোধ-দুয়ে মিলে তাঁর লেখা হয়ে ওঠে সুখপাঠ্য।
জন্ম ১৯৭৩ সালে নােয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে। লেখালেখির শুরু ৯০-এর দশকে। মানুষকে নিয়ে ভাবনা করতে তিনি ভালােবাসেন। ভাবুক মানুষ মৌচাকের মতো। ওদের দিকে ঢিল ছুড়লে খবর আছে। কথার মৌমাছি ভনভন করে আপনাকে ঘিরে ধরবে। মানুষের সঙ্গে মেশী তার স্বভাব, মানুষের ভেতরের গল্প জেনে নেওয়া তাঁর শখ। তার ভাঁড়ারে তাই অনেক গল্প। এই সব গল্প নিয়ে তিনি ভাবেন। বিচিত্র মানুষের বিচিত্র গল্প তাকে টোকা দেয়, তার মৌচাকে আঘাত লাগে। গল্পের মৌমাছিরা ভনভন করে বেরিয়ে আসে। পেশায় শিক্ষক মাইনুল এইচ সিরাজীর লেখার ভিন্ন একটা সুবাস আছে। কিংবা ভিন্ন একটা স্বাদ। সরল চিন্তা, সাবলীল ভাষা, রসবােধ—এই স্বাদ-সুবাসের সঙ্গে মজাদার মসলা হিসেবে যুক্ত হয়।