বিশ শতকের বাংলা ও বাঙালির মননের জগতে সন্তোষ গুপ্ত একটি অবিস্মরণীয় নাম। পেশার মাস্টারমশাই। যিনি শুধুই একজন সাংবাধিক নন, ছিলেন জীবনের সর্বগ্রাহী সংবাদের রূপকার। শিল্প-সাহিত্যের অসামান্য বোদ্ধা, নিষ্ঠাবান সাংবাদিক, চিন্তাশীল লেখক এবং অগাধ পা-িত্যের অধিকারী এই মানুষটির জীবনের কাছে আকাঙ্খা ছিল অত্যন্ত সামান্য।
ফিরে যেতে চাই গ্রন্থটি মূলত সন্তোষ গুপ্তের সমগ্র জীবনের চিন্তাচেতনা, মূল্যবোধ আর বিশ্বাসের এক সামান্য উপস্থাপন মাত্র। গ্রন্থটিতে তাঁর নিজের লেখা স্মৃতিচারণ, অনিয়তির দিন পঞ্জিকার কিছু অংশ ও বিভিন্ন সময়ে প্রিন্ট মিডিয়াকে দেয়া তাঁর সাক্ষাৎকারসমূহ একত্রিত করা হয়েছে।
সন্তোষ গুপ্ত অনিয়মিতভাবে ডায়েরি লিখতেন। সন তারিখ দেওয়া আছে এমন ডায়েরিতে লিখতেন তিনি। লিখেছেন খুব বিচ্ছিন্নভাবে। হয়তো জুনের ৪ তারিখ লিখলেন, তারপর লিখলেন ডিসেম্বর। গ্রন্থে উল্লেখিত ডায়েরির অংশগুলো দৈনন্দিন দিনপঞ্জির মতো না হলেও তাঁর চিন্তা-ভাবনা ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির এক প্রচ্ছন্ন প্রতিফলন ঘটেছে যার একটি সাহিত্যমূল্য খুঁজে পাওয়া যাবে।
সন্তোষ গুপ্ত জম্ম : ৯ জানুয়ারি ১৯২৫ খৃ. মৃত্যূ : ৬ আগস্ট ২০০৪ খৃ. জম্মস্থান : ঝালকাঠি জেলার র-নসী গ্রাম। পিতা : যোগেশ চন্দ্র গুপ্ত মাতা- কিরণবালা গুপ্তা
১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীকালে কোলকাতা সিটি কলেজে পড়াশুনা করেন। পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারী চাকরীতে যোগ দেন ১৯৪৪ সালে। সে বছরই কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হন। ১৯৪৯ সাল থেকে বহুবার রাজনৈতিক কারনে কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে স্বেচ্ছায় পার্টি থেকে সরে আসেন। সাংবাদিকতায় আসেন ১৯৫৭ সালে। সাংবাদিক হিসেবে সন্তোষ গুপ্ত ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁর সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠা আগামীতেও বহুকাল এদেশের সংবাদপত্র জগতে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর ‘অনিরুদ্ধের কলাম’ এদেশের বিদগ্ধ মহলে বিশেষভাবে সমাদৃত ছিল।রাজনীতিবিদদের জন্য ছিল দিক্ নিদের্শনা। বস্তুত এই পেশাগত সম্মান বা খ্যাতিই জীবনকালে লেখক, সাহিত্য-সমালোচক, কবি ও শিল্পবোদ্ধা হিসেবে তাঁর অন্য পরিচয়টিকে যেন খানিকটা আড়াল করে ছিল।
মৌলিক গ্রন্থ : ১১ সম্পাদিত : ৩ একুশে পদক সহ অসংখ্য পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
সন্তোষ গুপ্ত। প্রয়াত এই যশ্বসী প্রতিভা জন্মেছিলেন ঝালকাঠি জেলার রুনসী গ্রামে। বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান সন্তোষ গুপ্ত (১৯২৫- ২০০৪) সাংবাদিকতায় আসেন ১৯৫৭ সালে। তারপর দৈনিক আজাদ , দৈনিক সংবাদ-এর বিভিন্ন পদে বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন। অর্থাৎ সব কাজে যেমন তিনি প্রাজ্ঞ ছিলেন তেমনি পড়াশুনার জগৎটাও ছিলাে বিশাল। আর এ কারনে তিনি সবার অগােচরেই একটি আশ্রয়- একজন সন্তোষদা হয়ে উঠেছিলেন সবার কাছে। ধর্ম, রাজনীতি, দর্শন, শিল্পকলার বিভিন্ন দিকে তাঁর ছিলাে অবাধ বিচরণ। জেলখানার চাকরি করেছেন। করেছেন কমিউনিস্ট রাজনীতি। যে জন্য জেলখানার চাকরি করেও জেলের লৌহকপাটের মধ্যে জীবন কাটিয়েছেন প্রায় এক যুগ।। দেশের কোন গণসংগ্রামে সন্তোষ গুপ্ত পিছিয়ে ছিলেন না। কখনও তাঁর লেখা অনিরুদ্ধের কলাম আজও সংবাদপত্র জগত ও পাঠকদের কাছে সমাদৃত। এই মনীষী আমৃত্যু জীবনের বাঁকে বাঁকে নতুনের সন্ধান করে গেছেন। কবিতা, প্রবন্ধসহ গদ্য-পদ্য রচনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে অনুত্তম বক্তব্য, অনালােকে আলােকস্তম্ভ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বনাম সাংবাদিকতা, ইতিহাস আমাদের দিকে, ইতিহাসের ঝর্ণাধ্বনি, বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের স্বরূপের সন্ধান, শিল্প সমাজ ও বাস্তবতা, অসমাপ্ত কবিতা, একুশের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ উল্লেখযােগ্য। সন্তোষ গুপ্ত সাংবাদিকতা জগতে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তাঁর জীবন বীক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে পারলে এই দুঃসময়ে একজন দেশপ্রেমিক তৈরি করতে খুব কষ্ট হবে না ।