‘বাংলাদেশে ফরাসি জর্নালের ধরনে লেখা সাহিত্য আজ পর্যন্ত কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। কোনো বিশিষ্ট সাহিত্যিক জর্নাল লিখেছেন? রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতি লিখেছিলেন, কিন্তু সে-বইয়ে দিনের পর দিন তারিখ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কিছু লেখার প্রয়োজন আছে, মনে করেননি তিনি।... আমাদের সাহিত্য ক্রমেই আরও অব্যর্থ গভীর হতে না পারলেও ইয়োরোপীয় সাহিত্যের অনুভাবে বিস্তার লাভ করার পথ অবারিত হয়ে উঠছে; বাংলা সাহিত্যে ক্রমে জর্নাল দেখা দেবে বলে মনে হচ্ছে।’ - ‘লিটারারি নোটস্’ : জীবনানন্দ দাশ
লেখক পরিচিতি আবদুল মান্নান সৈয়দ আমাদের সাহিত্যপরিম-লের এক অনিবার্য ব্যক্তিত্ব। কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-সমালোচনা-গবেষণা-কাব্যনাটকসহ সাহিত্যেও সব-ক’টি অন্দরমহলেই তিনি নিজস্বতার সহজাত স্বাক্ষর রেখেছেন। এখনো তাঁর কলম সতৃষ্ণ এবং নতুনতর বিষয়ের অভীক্ষায় প্রবৃত্ত। পাঁচ দশকের উদ্ব্যস্ত সাহিত্যকর্মে লিপ্ততার ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে তিনি ডায়েরিও লিখে গেছেন। প্রথমবারের মতো বিগত তিরিশ বছর (১৯৭৮-২০০৮) সময়সীমার মধ্যে তাঁর ডায়েরি সংস্থিতি পাচ্ছে এই বইয়ে। একজন উজ্জ্বল ব্যক্তির দিনলিপির ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সেটি তো আছেই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে সময়ের ভিতর দিয়ে এসেছেন তার নানা বাঁক-বদল, তাঁর নিজস্ব ভাবনাজগৎ ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাঁর সাহিত্যিক নিবেদনকে বুঝতেও সহায়তা করবে।
আবদুল মান্নান সৈয়দ (৩ আগস্ট ১৯৪৩ - ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক। তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের "পোয়েট ইন রেসিডেন্স" ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর ষাট দশক থেকে বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যে তার গবেষণাধর্মী অবদান ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের উপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে। তিনি ফররুখ আহমদ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, সমর সেন, বেগম রোকেয়া, আবদুল গনি হাজারী, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, প্রবোধচন্দ্র সেন প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদককে নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের সাহিত্যমহলে তিনি 'মান্নান সৈয়দ' নামেই পরিচিত ছিলেন।