"ফকির লালন সাঁই দর্শন ও সমাজতত্ত্ব" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ফকির লালন সাঁই : দর্শন ও সমাজতত্ত্ব একই সাথে ফকির লালন সাঁইজির দর্শন ও সমাজতত্ত্ব সমন্ধে নতুন পাঠ। আমরা লক্ষ করেছি যে এ যাবত শুধু লালন ফকিরের গানের বাহ্যিক আলােচনাই গবেষকগণ করে এসেছেন। কিন্তু লালন ফকির যে তার গানের ভেতর দিয়ে গভীর দর্শন প্রচার করে গেছেন- সে সমন্ধে তেমন একটা গবেষণা আজো হয়নি। আসলে লালন ফকিরের গান তাে বিনােদনের বস্তু নয়- বরং একটি উচ্চমার্গিক দার্শনিক উচ্চারণ। ফকির লালন সাঁই সমাজে একটি স্বতন্ত্র দর্শন প্রচারের মাধ্যমে বাংলার নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ সমাজে ভেতরে ভেতরে যে পবির্তনের হিল্লোল তৈরি করে নিশ্চল সমাজটাকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছিলেন সে বিষয়টি আজো কারাে গবেষণায় তেমনভাবে উঠে আসেনি। আমরা আশা করছি এ গ্রন্থ পাঠে লালন ফকির এবং তার রচিত গান সম্পর্কে আমাদের নতুন ভাবনার উদ্রেক অবশ্যই হবে। আবু ইসহাক হােসেন প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লালন ফকির, তার দর্শন নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। লালন ফকিরের উপর তার রচিত বই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় রেফারেন্স বই হিসেবে পঠিত হচ্ছে। তিনি শুধু যুক্তি বা শুধু ভক্তি দিয়ে নয় বরং যুক্তি ও ভক্তির সমন্বয়ে লালন ফকিরকে বিচার করতে চান। কারণ শুধু ভক্তি এবং শুধু যুক্তি কোনােটাই লালন ফকিরকে নিয়ে গবেষণার পূর্ণাঙ্গ রূপ নয়। তাই তিনি লালন ফকিরকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করার জন যুক্তি ও ভক্তিকে সমানভাবে গ্রহণ করে লালন ফকিরের দর্শন ও সমাজতত্ত্বকে বিচার করেছেন। আশা করছি সর্ব শ্রেণির পাঠক লালন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ পাঠ অবশ্যই পাবেন এই বইটির মাধ্যমে। -প্রকাশক
আবু ইসহাক হােসেন জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানার তালম গ্রামে ২৫ নভেম্বর ১৯৭৪ সালে। তবে মায়ের দেওয়া তথ্য মতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় তার জন্ম । চাচার কাছে পড়াশােনার হাতেখড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স । একই বিভাগে ফকির লালন সাঁইয়ের উপর পিএইচডি গবেষণারত। কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে লেখালেখি শুরু হলেও উপন্যাস, গল্প, ছড়া লিখছেন সমানভাবে। তবে তাকে সবচেয়ে বেশি টানে একাডেমিক গবেষণা। ইতােমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষক হিসেবে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছেন । তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ । লালন ফকিরের উপর রচিত তাঁর মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ দেশে বিদেশে সমাদৃত । তিনি ক্রমেই নিজেকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় । ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে অচিন মানুষ নামে বাউল দর্শনের উপর গবেষণাধর্মী অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করে আসছেন। প্রায় দীর্ঘ সাত বছর তিনি নতুন কল্লোল সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে একতারা নামক একাডেমিক জার্নাল সম্পাদনা করছেন। গবেষণার জন্য জাতীয় মানবধিকার সােসাইটি স্বর্ণপদক, বজ্রকণ্ঠ সম্মাননা ও বাউল বাজার সম্মাননা তিনি লাভ করেছেন।