কামরুল বসিরের কাছে কবিতা এক আশ্চর্য সৌরজগৎ-না ওঠা সূর্যের জন্য ক্লান্তিকর প্রতীক্ষার উল্টো পাশে, কী এক যাদুবাস্তবতায় তিনি নিয়তই সৃষ্টি করে চলেন অদ্ভুত সব বর্তুল। এমনই অনায়াস-এমনই ঠান্ডা জলের গেলাস যে, প্রথম পাঠেই তাঁর কবিতা হয়ে উঠে ইভের পানপাত্র, সচকিত চৈতন্যে টান পড়ে, ভাবি আহ! এই তো কবিতা-ক্রান্তিতে কিংবা জৌলুশে এই-ই তো আমার চাই। জীবনানন্দের ছায়া থেকে নিজেকে তিনি উড়িয়ে এনেছেন অনেকটা পথ-এখন তিনি শুধুই নিঃসঙ্গ চিল, যেন কাকতালে জেনে গেছেন আধুনিকতার বয়ামে জমা আছে কী রূপ রহস্যের আচার। কবুল করি প্রেমেই হয়তো জীবনের দীর্ঘতম বগি, তাই বলে অ-প্রেম কি অচ্ছুৎ? এই রূপ সত্যে ওয়াকেফহলে কবি তাই অপ্রথায় তাঁর আস্থা: কৌতুক, কাম, পরাভাব কিংবা বিদ্বেষকেও আপন করেছেন-গেঁথেছেন শব্দের বড়শিতে। কামরুল বসিরের কবিতায় কেন এক বৈচিত্রের কলস্বর? কেন তার শব্দেরা যুবতী নাসপাতির মতো কচকচে? কেন তার উপমারা এতটা ভার্জিন? কারণ জানালায় উঁকি দেওয়া পিপিং টম নন তিনি, বরং সিংহদ্বার পেরিয়ে নির্বিকার হেঁটেছেন শিল্পকলার প্রতিটি গোপন কামরায়-কী ছোট গল্পে, কী ফিল্মে, কী জলরং অথবা তৈলচিত্রে। তাই তো ক্লেদ মনের হলুদ ঊষাকে নিয়ে এসেছেন কাব্য ভাবনায়-কানদিনস্কির মানিব্যাগ চুরি করার মতো উল্কি পরা বাসনারাও সাঁতরায় তাঁর ছত্রে। বাইসাইকেল থিব ছবির ছোট বাচ্চাটির অভিমান যেমন তাঁর জানা-তেমনি জানা মোঁপাসার ছোট গল্পের লাড্ডু। এ কথা যদি সত্যি হয় কামরুল বসির একজন প্রবাসী কবি, তার চাইতেও বড় সত্যি হলো পুরো প্রবাসকেই তিনি রং রূপ আর তৃষ্ণা সমেত তুলে এনেছেন শব্দের দীপাবলিতে-বাংলা কাব্যে। ব্লগে অনলাইনে মুগ্ধ পাঠ, তবু ছাপার অক্ষরে এটিই কবির প্রথম সদ্যজাত। কামরুল বসির যদি শেষ পর্যন্ত কামরুল বসিরই থাকেন তাতেই চলবে-তাঁর নিজস্বতা আর শুদ্ধ কাব্যচারিতাই ইতিহাস হবে একদিন। সাইম খন্দকার কবি, ব্যারিস্টার লন্ডন