এই বইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে লেখা। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং এক পর্যায়ে তাজউদ্দীন আহমদ মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। তাঁকে পরবর্তীকালে গঠিত বাকশালে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন তাজউদ্দীন আহমদ। অন্য তিন জাতীয় নেতার সাথে তিনিও গ্রেপ্তার হন এবং কারাগারে নিহত হন। নিজের প্রাণের বিনিময়ে তাজউদ্দীন আহমদ প্রমাণ করেন যে, তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুগত ছিলেন। আর বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনসহ চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল একইসূত্রে গাথা-একই চক্রান্তের অংশ। স্বাধীনতার পরে এক অস্থির, সংকটময় সময়ে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল কেন? কাদের ভূমিকা ছিল এর পেছনে? তাজউদ্দীন আহমদ খ্যাতনামা রাজনীতিক ছিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর কোনো তুলনাই হয় না। তারপরও তাজউদ্দীন আহমদ ক্ষমতা না ছেড়েই বঙ্গবন্ধুর সরকারের সমালোচনার মাধ্যমে প্রকারান্তরে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন কেন? এসব প্রশ্ন সেদিনের মতো আজো বিভিন্নভাবে ওঠে রাজনৈতিক মহলে। এসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই বইটিতে। সেই সাথে তুলে ধরা হয়েছে সেই সময়কার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
আমির হোসেন একজন সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ডেইলি সান-এর সম্পাদক। এর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ টুডের নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক বাংলার বাণীর সহকারী সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক এই সময়-এর সম্পাদক। ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তাঁর আগে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন বার্তা সংস্থা পিপিআই-এর স্টাফ রিপোর্টার। আর মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ‘সংবাদ পর্যালোচনা’র স্ক্রিপ্ট লিখেছেন এবং সাপ্তাহিক বাংলার বাণীর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সেই ক্রান্তিকালের এই ছয় বছর সময়ে তিনি ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ইত্যাদি কভার করেন। ইত্তেফাকে তাঁর দায়িত্ব ছিল রাজনৈতিক সংবাদ, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করা। সেই সুবাদে মাত্র ছয় বছরের মধ্যে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তরণ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর তিনি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁর লেখা প্রথম বই মুজিব হত্যার অন্তরালে প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। কিন্তু তৎকালীন প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বইটির লেখক হিসেবে তিনি নিজের নামের পরিবর্তে ‘ইশতিয়াক হাসান’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতে বাধ্য হন। তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন। কথাসাহিত্যেও তার পদচারণা দেখতে পাবেন পাঠক সূর্যতোরণ এবং যুদ্ধ ও প্রেম ১৯৭১ উপন্যাসের মাধ্যেমে।