‘বাবুরনামা-১ম খণ্ড’ বইটিতে লেখা ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকা ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিতজনদের নিকট সম্রাট বাবুরের আত্মজীবনী একটি সুপরিচিত গ্রন্থ। বর্তমান পুস্তকটি তারই অনুবাদ। বাবুর তাঁর মাতৃভাষা জাঘতাই বা চাঘতাই তুর্কীতে এ আত্মজীবনী রচনা করেন। বাবুরের পিতৃপুরুষের দেশ ফরগনায় অদ্যাবধি এ ভাষা যেরূপ বিশুদ্ধভাবে উচ্চারিত হয়, অপর কোথাও তা হয় না। মূল তুর্কী ভাষায় এ উপভাষাটি মহাবীর চেঙ্গিজ খানের পুত্র চাঘতাই খানের তদানীন্তন বিপুল সাম্রাজ্যের ধ্বত্র প্রচলিত ছিল। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে চাঘতাই খানের সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল উত্তরে উলুঘতাঘ পর্বতমালা থেকে দক্ষিণে হিন্দুকুশ পর্বতমালা, পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর থেকে পূর্বে তেরকান খাশগড় ও ইথারকন্দ ছাড়িয়ে গোবী মরুভূমি পর্যন্ত। চাঘতাই তুর্কী প্রধানত মরুবাসীদের ভাষা বলে বিবেচিত হত। সমভূমি অঞ্চল বিশেষত জাকজারটিস নদী বা শীর দরিয়ার তীরবর্তী শহরসমূহের ও তার দক্ষিণের অধিবাসীদের ভাষা ছিল ফার্সি অপরদিকে পার্বত্য অঞ্চলের লোকজনদের মধ্যে তাদের উপজাতীয় ভাষারই প্রচলন ছিল। চাঘতাই তুকী হচ্ছে বিরাট তুর্কী জাতির সে অংশটির উপভাষা যাদের মোঘলদের সঙ্গে পার্থক্য বুঝাবার জন্য তাতার আখ্যা দেয়া হয়। তবে এরূপ আখ্যাদান বোধ হয় ভুল। বস্তুতপক্ষে তুকী এ মহান জাতির ভাষা। খাশগড়, ক্রিমিয়া, সমরখন্দ বুখারা, কনস্টান্টিনোপল, তুরস্কের বৃহত্তর অংশ, পারস্যের প্রধান যাযাবর উপজাতিসমূহের ভাষা মূলত চাঘতাই তুকীর অনুরূপ। সত্যিকারভাবে বলতে গেলে পারস্য দেশের অর্ধেক অধিবাসী, এশিয়া-মাইনরের তুর্কোমান, উজবেক, কিরগিজ, কাজাক, বশকীর ও অন্যান্য বহু উপজাতি এ ভাষাতেই কথা বলে। তুর্কী ভাষার প্রচলিত উপভাষাসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মিশ্র ভাষা হচ্ছে কনস্টান্টিনোপলের তুর্কীদের মধ্যে প্রচলিত ভাষা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে বিগত কয়েক শতাব্দী যাবত তুর্কী ভাষার মধ্যে কনস্টান্টিনোপলের তুর্কীদের ভাষাই সর্বাপেক্ষা মার্জিত বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। অবশ্য অন্যান্য এলাকার ভাষার সাথে এ ভাষার তেমন কোন প্রভেদ নেই এবং বিভিন্ন উপজাতির লোকেরা একে অপরের ভাষা ভালভাবেই বুঝতে পারে। বাবুরের আমলের পূর্বে তুর্কী ভাষা যথেষ্ট মার্জিত ভাষা বলে পরিচিত ছিল। ঐ যুগে প্রাচ্যের সুসংস্কৃত ভাষাসমূহের মধ্যে তুর্কী ভাষা যে-কোন বিচারে স্থান পেত। ককেশাশ পর্বতমালা, কাস্পিয়ান সাগর ও শীর (সাবেক জাকজারটিস) নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বহু তুকী আমীর তাদের বিজিত এলাকাসমূহে আরবি ভাষা ও সাহিত্যকে উৎসাহদান করলেও এবং তাদের দরবারে কতিপয় বিশিষ্ট ফার্সি সাহিত্যিক স্থান পেলেও নিজ পরিবার ও গোষ্ঠীর লোকজনদের সাথে তাদের নিজস্ব ভাষায়ই ভাববিনিময় করতেন। স্যার উইলিয়াম জোনসের মতে তৈমুরের আত্মজীবনী বলে কথিত গ্রন্থটি তৈমুরের নিজের লিখিত নয়।