"অন্তরঙ্গ আলাপ" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: বর্ণাঢ্য শিক্ষক, ষাটের দশকের সাহিত্য-আন্দোলনের পুরোধা, বিনোদন জগতের দর্শকনন্দিত উপস্থাপক- এমন বিচিত্র আর বহুমুখী পরিচয় তাঁর। তার একটা বাণী- তিনি সফলতা আর সার্থকতা নিয়ে বলেছেন, সফলতা হল একটা স্বার্থপরতা আবেগ যা শুধু নিজের জন্য ভাবায়। মৃত্যুর সাথে সাথে সফল মানুষেরা হারিয়ে যায়। কিন্তু সার্থক মানুষেরা মানুষের মাঝেই আজীবন বেচে থাকে। এই বইতে এমনই সব অসাধারণ কথা রয়েছে। সাংবাদিক অরুন চৌধুরি আর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সারের মধ্যেকার নানা প্রশ্ন এবং তার কাব্যিক উত্তরসহ সমাজের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা লিপিবদ্ধ হয়েছে এই বইতে।
"অন্তরঙ্গ আলাপ" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা কথা: ‘অন্তরঙ্গ আলাপ’ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি সাক্ষাঙ্কার-গ্রন্থ। সাংবাদিক অরুণ চৌধুরীর নানা বিষয়ের ওপর করা প্রশ্নের স্বভাবসুলভ কাব্যিক উত্তর দিয়ে গেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। বর্ণাঢ্য শিক্ষক, ষাটের দশকের সাহিত্য-আন্দোলনের পুরােধা, বিনােদন জগতের দর্শকনন্দিত উপস্থাপক—এমনি নানা বিচিত্র আর বহুমুখী পরিচয় তার। শুধু তা-ই নয়, এক অসম্ভব সময়ে দেশের লক্ষ লক্ষ কিশােরতরুণ-যুবাদের আলাের দিকে আহ্বান করে তিনি নিয়েছেন যুগ-সংস্কারকের ভূমিকা। বস্তুবাদ, সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ও পরিণতি, রাষ্ট্রভাবনা, মৃত্যুচিন্তা, ভালােবাসা, প্রেম, বিবাহপ্রথা এমনকি নারীর সৌন্দর্যের অহংকারের মতাে সাধারণ বিষয়গুলােও এ বইয়ের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। খুলে দিয়েছে এক অপ্রচলিত কিন্তু প্রয়ােজনীয় দর্শন-ভাবনার নতুন জগৎ। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের এ সাক্ষাৎকার-গ্রন্থটি তাই হয়ে উঠেছে সূক্ষ্ম মানবীয় ও চিরায়ত অনুভূতির এক অনবদ্য দলিল—যা শুধু একজন ব্যক্তি-মানুষের একান্ত স্বপ্ন, চিন্তা আর আশাবাদের। আলাপচারিতায় পূর্ণ নয়, বরং এক উদারনৈতিক জীবনদর্শনেরই অন্য নাম।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একইসাথে একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিকও। আর সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে থাকায় একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও পরিচয় লাভ করেছেন তিনি। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কলকাতার পার্ক সার্কাসে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কামারগাতি গ্রাম। পাবনা জিলা স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক এবং বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার্থে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ঢাকা কলেজ, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আর ষাটের দশকে বাংলাদেশে সাহিত্যের এক নতুন ধারা সৃষ্টির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে, এবং একইসাথে 'কণ্ঠস্বর' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করে নতুন ঐ সাহিত্যযাত্রাকে করেছিলেন সংহত ও বেগবান। শুধু তা-ই নয়, দেশের মানুষের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে তাদের মাঝে জ্ঞান ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র', যা চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে এই লক্ষ্যে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমূহ এই ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ভাঙো দুর্দশার চক্র', 'আমার বোকা শৈশব', 'নদী ও চাষীর গল্প', 'ওড়াউড়ির দিন', 'অন্তরঙ্গ আলাপ', 'স্বপ্নের সমান বড়', 'উপদেশের কবিতা', 'অপ্রস্তুত কলাম' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক', 'র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার' ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।