'এবার কিন্তু নিজের সুটকেস নিজেকেই টানতে হবে।' শৌমিক মাহমুদ এদিক-ওদিক তাকিয়ে গরুর সিনার হাড় আস্তে করে মুখে পুরে বললেন। বাক্যটি নিঃসন্দেহে শৌনককে উদ্দেশ করে বলা। নিজের মনেই হেসে নিল শৌনক। বাবার কাণ্ডটা ওর দৃষ্টি এড়ায়নি। মা আশপাশে থাকলে সিনার হাড় খাওয়ার কম্মটি করতে পারতেন না বাবা। একটা বয়সের পর নাকি হিসেব করে খেতে হয়। বাত হয়, ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে, কোলেস্টেরল বাড়ে, হার্টে অসুখ হয়, আরও কত কী! তার উপর ডায়াবেটিস থাকলে তো কথাই নেই। শৌনকের ভাবনাকে গরুর সিনার হাড়ের দিক থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্যই যে শৌমিক মাহমুদ সুটকেসবিষয়ক আলোচনার সূত্রপাত করলেন, তা বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না শৌনকের। তবে, কথাটা মিথ্যে নয়। এবারই প্রথম শৌনকের কাপড়চোপড় আলাদা সুটকেসে যাচ্ছে। এতদিন মা-বাবার সুটকেসেই ওর কাপড়চোপড় নিতে হতো। মাঝেমধ্যে ও অনুযোগ করেছে, 'সবার নিজের সুটকেস আছে। সনকা আপুরও আছে। আমার থাকবে না কেন?' সে কথা কয়েকবার শোনার পর শৌমিক মাহমুদ আর ইলোরা মাহমুদ ঠিক করলেন, শৌনককে একটা ভালো সুটকেস কিনে দেবেন। মাঝারি আকারের কালো রঙের সুটকেস এখন শৌনকের অধিকারে। চাকা আছে। তালাটাও চমৎকার। তিনটি সংখ্যা লিখে তালাটা ঘুরিয়ে দিলেই হয়। নিজে ছাড়া আর কেউ জানবে না গোপন নম্বরটি। যখন খোলার দরকার, তখন আবার সংখ্যাগুলো ঘুরিয়ে টান দিলেই হলো।
জাহীদ রেজা নুর ছােটদের জন্য লিখছেন অনেকদিন ধরে ছেলেবেলা থেকেই শিশুসাহিত্য গুলে খাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফলে, শিশুদের উপদেশ দেওয়ার চেয়ে শিশুদের কাছ থেকে উপদেশ নেওয়ার দিকেই তার ঝোঁক। প্রতি বছর একবার দলবলসমেত বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে, তারপর সে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লিখে ফেলেন উপন্যাস। সে উপন্যাসের নায়ক অবধারিতভাবেই শিশু বা কিশাের । বড়রাও থাকেন সে লেখায়, থাকতেই হয়, কিন্তু তারা কখনও মুখ্য হয়ে ওঠেন না। জন্ম ২৭ অক্টোবর। ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। প্রথম আলাে পত্রিকায় কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিদেশি ভাষা থেকে শিশুদের জন্য অনুবাদ করার নেশা আছে। তার বইয়ের সংখ্যা ১৫ ছাড়িয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হােসেন তার বাবা। মা নূরজাহান সিরাজী। আটভাইয়ের মধ্যে সপ্তম তিনি। স্ত্রী, মেয়ে সনকা আর ছেলে শৌনককে নিয়ে তার সংসার। সারা জীবন ছােটদের মতাে করে ভাবতে চান তিনি। আর ভাবেন, ইস! যদি বড় হতে না হতাে!