ফ্ল্যাপে লিখা কথা দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন কবি সুকান্ত। এ স্বপ্নেই এক সময়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এ দেশের বামপন্থী আন্দোলনে। মামুন রশীদ এ স্বপ্নকেই নিয়ে এসেছেন অর্থনীতিতে। তাই তিনি তাঁর বইয়ের নাম রেখেছেন ‘বদলে দেওয়ার অর্থনীতি’।
বদলে দেয়ার প্রয়োজন তখনই অনুভূত হয় যখন সংকট দেখা দেয়। সংকট নিয়ে আমাদের অহেতুক ভয় রয়েছে। সংকট সব সময়ে ভয়ের কারণ নয়। চীন ভাষায় সংকটের মোকাবিলা না করতে পারলে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সংকট সামনে এগিয়ে যাওয়অর সুযোগও সৃষ্টি করে। যারা সাহসের সাথে সংকট উত্তরণ করতে পারে তারাই ছিনিয়ে আনতে পারে সাফল্যের স্বর্ণমুকুট। মামুন রশীদ যেমন পুরাতন সংকট ও বিপদের কথা বলেছেন, তেমনি তিনি নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা কথাও বলেছেন।
মামুন রশীদ গজদন্তবিহারী তাত্ত্বিক নন।তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র সাধারণ মানুষের অর্থনীতি। তিনি জানেন কীভাবে জটিল বিষয়কে সহজ করে প্রাঞ্জল ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হয়। ‘অর্থনীতি কি খুব খারাপ চলছে?’ ‘এখন কি বাংলাদেশের সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার উপযুক্ত সময়?’ ও ‘টাকার মূল্য কমলে কার কী লাভ?’ এই তিনটি প্রবন্ধে তিনটি জটিল সাম্প্রতিক সমস্যার বোধগম্য বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
লেখকের বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে অত্যন্ত দীর্ঘ, ব্যাপক ও ঋদ্ধ অভিজ্ঞতা রয়েছে। বইটিতে ব্যাংক ব্যবস্থা ও ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কয়েকটি প্রবন্ধ রয়েছে। আগ্রহী পাঠকরা এ সব প্রবন্ধে চিন্তার খোরাক পাবেন। লেখক বিশ্বাস করেন যে বেসরকারি খাতের সৃজনশীলতা ও প্রশাসন যন্ত্রের দক্ষতার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বদলে দেওয়া সম্ভব। তবে এ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে । প্রশাসনিক সংস্কার সম্পর্কে লেখকের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট ও বলিষ্ট। মামুন রশীদ আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে বর্তমান ক্রান্তিকাল আমাদের জন্য নতুন সুযোগের সৃষ্টি করছে। এসব সুযোগের সদ্বব্যবহারের উপরই নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ।
সূচিপত্র * বাংলাদেশে বিপণন এবং বাংলাদেশের বিপণন * বাংলাদেশের অর্থনীতি : ৪০ বছরের পথচলা * বাংলাদেশে পরিবর্তনের চালচিত্র * চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি * অর্থনীত কি খুব খারাপ চলছে? * অর্থনীতির ‘অর্থ’ নাই? * জবাবদিহিতার রাজনীতি , সুশাসনের অর্থনীতি * জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভর্তুকির রাজনৈতিক অর্থনীতি * এখন কি বাংলাদেশের সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার উপযুক্ত সময়? * যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আবারও মন্দা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ * ওয়ালস্ট্রিট দখল আন্দোলন ও বাজার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ * অন্তর্বর্তীকালিন সরকার কি ভালো কিছু করেছিল * উন্নয়নের স্বার্থে প্রশাসনে সংস্কার চাই * ঈদুল আজহার রাজনৈতিক অর্থনীতি * বাংলাদেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন আছে কি? * বাংলাদেশের ব্যবসায়ের পরিবেশ * রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সংস্কার জরুরি * টিসিবি সক্রিয় হলে কি বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে? * টাকার মূল্য কমলে কার কী লাভ ? * ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গের আগেই সংস্কার করুণ * ১৯৪৭ সালের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন * সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি কতটা সাহায্য করবে? * গ্রামীণ ব্যাংকের কী হবে? * অধ্যাপক ইউনূস-পরবর্তী অধ্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ খাত * স্যামসন এইচ চৌধুরী : বাংলাদেশের উদ্যোক্তার প্রতিকৃতি * বাংলাদেশে ব্যাংকিংয়ের চার দশক * বদলে দেওয়ার অর্থনীতি
মামুন রশীদের জন্ম ১৯৬১ সালে । পিতার সরকারি চাকুরির কারণে ঘুরেছেন বাংলাদেশের অনেক জেলায় । শৈশব কেটেছে সিলেটে, কৈশোর নোয়াখালীতে । পড়াশোনা করেছেন সিলেট জিলা স্কুল, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের হেনলি ম্যানেজমেন্ট কলেজে । স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসনে । পরবর্তীতে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল, কেলগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট, যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিজনেস স্কুল, ক্রেনফিল্ড স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট এবং ভারতে ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেস -এ ।লেখালেখির শুরু সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, স্কুল এবং কলেজের দেয়ালপত্রিকা এবং সাময়িকীতে । নিয়মিত পত্রপত্রিকায় সত্তর দশকের শেষ দিকে । প্রকাশিত লেখার সংখ্যা সাতশ'র অধিক । প্রিয় বিষয় প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন, বাজার সংস্কার ও উন্নয়ন । পেশাগত জীবনের শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে আশির দশকের শুরুতে । ব্যাংকিংয়ের সাথে জড়িত হয়েছেন চুরাশির শেষ দিকে । প্রায় পঁচিশ বছর কাজ করেছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকে দেশে ও বিদেশে । বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় বহুল সুখ্যাতি অর্জন করেছেন । পাশাপাশি ব্যবসায় প্রশাসনের একজন খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসাবেও সম্পৃক্ত রয়েছেন গেল প্রায় তেইশ বছর যাবৎ । ব্যক্তিগত জীবনে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুনের স্বামী এবং ফাহমিদ রশীদের পিতা । দিনের শুরু প্রত্যুষে আর শেষ গভীর রাতে । ছুটে চলেছেন নিজ প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাফল্যের কাজে । সমাজ ও অর্থনীতির পরিবর্তনকামী অনেক সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ।