ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা কম হয়নি। এর ইতিহাস রচনা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। যথেষ্ট হয়েছে, বিশেষ করে প্রতিবছর একুশে উপলক্ষে বিষয় লেখালেখির মধ্য দিয়ে। এমন কি ছোটদের উপযো করে লেখা ভাষা-আন্দোলনের দুএকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তবু ছোটদের জন্য তরুণদের জন্য ছোট করে লেখার উদ্দেশ্য ভাষা। আন্দোলনের ইতিহাসের পাশাপাশি সে বিষয়েই বিশেষ কিছু কথা তাদের জানানো। বিশেষ করে বলা যে একুশের ভাষা আন্দোলনের উচ্চারিত মূল স্লোগানে যে আকাঙ্ক্ষা ও চেতনার প্রকাশ ঘটেছিল তা পুরোপুরি নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণীর ছিল না। ১৫৫ মধ্যে বাতালি সর্বসাধারণের অর্থনৈতিক সামাজিক স্বার্থের দিকটিও উপস্থিত ছিল। আন্দোলনের উদ্যোক্তা অরুণদের কেউ কেউ ঐ রে স্লোগান ঠিক করছিল ভেবেচিন্তেই করেছিল, এবং সবাই তা গ্রহণ করেছিল। যেমন সর্বস্তরে বাংলা চালুর স্লোগান। এর অর্থ জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন অফিস-আদালতে উচ্চশিক্ষা বিজ্ঞানশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার হাতে ভাষাভিত্তিক সত্যিকার জাতীয় চেতনা গড়ে ওঠে। যাতে প্রতিটি মানুষের জন্য শিক্ষার মাধ্যমে অর্থনৈতিক-সামাজিক সুযোগ সুবিধার পরিবেশ তৈরি করে। কিন্তু এ উদ্দেশ্য সফল হয়নি, লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ভাষাভিত্তিক ওভাষিক জাতীয়তা নির্ভর স্বাধীন বাংলাদেশ অনের পরও হয়নি। অথচ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আন্দোলনের কারিগর, স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্যোক্তা ঐ বিশেষ শ্রেণীর স্বার্থপরতার জন্য তা হয়নি। এ কথাটাই আজকের তরুণদের জানানো দরকার যে বাহান্নে তাদের আগ্র তরুণদের আকাঙ্ক্ষা এখন স্বাধীন বাংলাদেশে ছাইচাপা পড়েছে। যাতে একুশের উচ্চারণ বাস্তবের মুখ দেখতে পারে এখন সে দায়টা বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের। একথাটাও জানিয়ে দিতে একুশের তথা লেখা।
প্রাবন্ধিক, কবি ও কলামিস্ট হিসাবে খ্যাত আহমদ রফিক, (জন্ম ১৯২৯) ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতির আকর্ষণে সমভাবে আলোড়িত ছিলেন। তিনি বাহান্নার ভাষা-আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তার শিক্ষাজীবন বার বার বিপর্যস্ত হয়েছে। পেশাগতভাবে শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে একদা যুক্ত থাকা সত্ত্বেও মননের চর্চাতেই তিনি অধিক সমর্পিত। এখন পুরোপুরি সাহিত্যকর্মে সক্রিয়। একাধিক সাহিত্য ও বিজ্ঞান পত্রিকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মযজ্ঞে। রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের তিনি প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমীর ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শিল্প সংস্কৃতি জীবন (১৯৫৮), আরেক কালান্তরে (১৯৭৭), বুদ্ধিজীবীর সংস্কৃতি (১৯৮৬), ভাষা আন্দােলন : ইতিহাস ও তাৎপর্য (১৯৯১), রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প (১৯৯৬), জাতিসত্তার আত্মঅন্বেষা (১৯৯৭), রবীন্দ্ৰভুবন পতিসর (১৯৯৮) এবং জীবনানন্দ : সময় সমাজ ও প্রেম (১৯৯৯)। নির্বাচিত কলাম (২০০০), বাংলাদেশ : জাতীয়তা ও জাতিরাষ্ট্রের সমস্যা (২০০০), একাত্তরে পাকবর্বরতার সংবাদ ভাষ্য (২০০১), কবিতা আধুনিকতা ও বাংলাদেশের কবিতা (২০০১)। কবিতাগ্রন্থের মধ্যে নির্বাসিত নায়ক (১৯৯৬), বাউল মাটিতে মন (১৯৭০), রক্তের নিসর্গে স্বদেশ (১৯৭৯), বিপ্লব ফেরারী, তবু (১৯৯৮), পড়ন্ত রোদুরে (১৯৯৪), Selected Poems (১৯৯৪), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৮). ভালোবাসা ভালো নেই (১৯৯৯), নির্বাচিত কবিতা (২০০১) উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান। সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পেয়েছেন ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি ও স্বদেশে রবীন্দ্র পুরস্কার (১৪১৮) । এছাড়া অনেক কাঁটা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক।