ভূমিকা যাকে নিয়ে সুন্দরবনের এত গর্ব, যার নামে নামকরণ “সুন্দরবন” সেই সুন্দরী গাছ আজ প্রায় অনেকটা বিলুপ্তির পথে।বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য খ্যাত সুন্দরবনের জন্য আমরা ভোট চাচ্ছি। সারা দেশে তথা বিশ্বের মানবতার কাছে ভোট দেয়ার আকুল আহবান সহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ও ইলেক্ট্রিনিক মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা ভোটের জন্য ক্যাম্পিং এবং প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। অথচ বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে আমরা গলাটিপে হত্যা করছি আর এর ধ্বংসলীলায় দাঁডিয়ে প্রকৃতির মরণ ছোবল আর মানুষ নামের এক শ্রেণীর কলংকিত লুটেরা বনদস্যু এবং তাদের দোসর জলদস্যুদের অত্যাচার-এর প্রতিকারে সোচ্চার এবং কোন ব্যবস্থা নিচ্ছিনা।প্রতিদিন এদেশের অনেক ক্ষমতাধর বরেণ্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যারা দেশ পরিচানায় সরকারকে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছেন তেমন আমলা, পেশাজীবী সহ জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও দেশে-গুনে এসে যেন নির্বাক থাকছেন।সিডর, আইলার ধ্বংসলীলায় ক্ষত বিক্ষত চিহ্ন বুকে ধারণ করে বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট “সুন্দরবন।” টানা ৩ দিন ২ রাত যতটুকু সম্ভব সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি আর মনের কাছে প্রশ্ন করছি আমরা কি এর উন্নয়ন ও প্রতিকারে কিছুই করতে পারি না? রয়েল ব্যাঙ্গল টাইগার খ্যাত সুন্দরবন আজ প্রায় মৃতপুরীর মত।শরীরের দুগ্ধ, ক্ষত ও ঘা নিয়ে চিৎকার করে সুন্দরবন জানাচ্ছে সিডর আর আইলায় যা ক্ষতি করতে তারচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে মানুষ নামের এক শ্রেণীর নরকীট। যারা সুন্দরী গাছ সহ সুন্দরবনের নানা গাছ কেটে পাচার করছে।তাতে কিছু কিছু সহয়তা পাচ্ছে বন বিভাগের কিছু দুর্তীতিবাজ কর্মচারি ও পাহারাদারদের।অবশ্য সবাই দুর্নীতিবাজ হলে এতদিনে হয়ত সুন্দরবনের অস্তিত্বে নিয়ে টানাপোড়ান হতো। এরমধ্যে অনেকে ভাল এবং দেশপ্রেমিক রয়েছে বলে সুন্দরবন এখনও বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর তারাইবা কি করবে। বন প্রহরী হয়ে চাকুরীতে ঢুকে ২৫-৩০ বছর ধরে একইভাবে পড়ে থেকে ক্লান্ত অবসন্ন দেহ নিয়ে ৫৭ বছর (বর্তমান ৫৯ বছর)পূর্ণ হলে অথবা তারও পূর্বে বনদস্যুদের হাতে পঙ্গু হয়ে এক সময় চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে চলে যায় বা যাবে।১ জন বনপ্রহরীকে পাহারা দিতে হয় প্রায় ৭ থেকে ৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা।তারপরও রয়েছে প্রতিনিয়ত বাঘ, সাপ সহ হরেক রকম বন্য প্রাণী, আর বনদস্যু ও জলদস্যুদের আক্রমণের ভয়। তাদের নেই কোন আধুনিক অন্ত্র। আধুনিক অন্ত্র থাকলে হয়ত তা দিয়ে প্রয়োজনে কাবু করতে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারত বাঘসহ মানুষরূপী বাঘ যেমন, বনদস্যু, জলদস্যু এবং কাঠ চোরাদের বড় সিণ্ডিকেটকে। শত বছরের পুরোনো মান্দাতার আমলের থ্রি-নট-থ্রি বা সমপর্যায়ের রাইফেল দিয়ে নিজের জীবন রক্ষা করাও বর্তমানে কঠিন।তাই বন প্রহরীরা কেবল চাকুরী রক্ষার্থে যতটুকু না করলে নয় তার বেশি কিছু হয়ত করার আগ্রহ থাকে না। দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদক শংকর কুমার দে-এর সুন্দরবনকে নিয়ে লেখা “সাময়িকী” পড়ে জানা গেল যা অনেক অজানা তথ্য রূপকথার মত কল্পকাহিনীও হার মানবে।“এভার গ্রীন” লঞ্চে চড়ে সুন্দরবন ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল একটানা ৩দিন ২ রাত্রি। কিন্তু কোথাও কোর রকম পাখির কলরব, বাঘ, হরিণ, শুকর, বক, মাছরাঙ্গার দল ঝাঁকে ঝাঁকে ভিড় করার দৃশ্য চোখে পড়েনি।মাঝে মাঝে ২/১ টি বানর আর কিছু গাংচিল চোখে পড়ে। সুন্দরবন ভ্রমণের কাহিনী শোনার আগে প্রথম অধ্যায়ে তার নৈসর্গিক দৃশ্য ও প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত অবস্থা ও সিকিউরিটি সম্পর্কে জেনে নেয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ব্যক্তিগতভাবে ট্যুরিস্ট প্যাকেজ গ্রোগ্রামে “সুন্দবরন ভ্রমণ কাহিণী” বর্ণনা করা হলো।