"ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ভারতবর্ষের বিগত দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে মুসলমানদের রয়েছে গৌরবদীপ্ত অবদান। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লােকাচার ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনধারায় মুসলমানদের প্রভাব অনস্বীকার্য। ভারতবর্ষের জাতীয় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্রমবিকাশ ধারায় মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও দেশমাতৃকার মুক্তিসংগ্রামে তাদের নজিরবিহীন আত্মত্যাগ ভারতের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনো কোনো বিদ্বেষভাবাপন্ন ইতিহাসবিদ মুসলমানদের চিহ্নিত করছেন আগ্রাসী, লুটেরা ও অপাংক্তেয়রূপে। তাদের অভিযোগ, মুসলমানরা নিয়েছেনই কেবল, ভারতবর্ষকে দিতে পারে নি কিছু। এ অভিযোগ একেবারে কাল্পনিক, ভিত্তিহীন ও সংকীর্ণতা প্রণোদিত। বক্ষমাণ গ্রন্থে বিশ্বের কীর্তিমান ইতিহাসবিদ, আরবি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল ও ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান হযরত আল্লামা সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. ঐতিহাসিক উপাত্তনির্ভর তথ্য ও যুক্তিভিত্তিক পর্যালোচনার মাধ্যমে এ সত্য তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন যে, মিশনারি জাতি হিসেবে মুসলমানরা এ দেশকে ভালবেসেছেন। এ দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন এবং এ দেশের মাটিতে তাঁরা সমাহিত হয়েছেন। মধ্য এশিয়ার মুসলমান সুফি, দরবেশ, বুদ্ধিজীবী, লেখক এবং পণ্ডিতগণ এসে ভারতের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যে যােগ করেছেন নতুন আঙ্গিক, নতুন মাত্রা ও নতুন রুচিবোধ।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।