"হিরোশিমা" ফ্ল্যাপের কথাঃ হিরোশিমা শহরের সিংহভাগ জনসংখ্যা সেদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। হিরোশিমা-নাগাসাকি-র কয়েক মাস পর, ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকার ম্যানেজিং এডিটর উইলিয়ম শন ঘটনাটি নিয়ে একটু অন্যরকম কিছু লেখালিখি প্রকাশ করার কথা ভাবছিলেন তার পত্রিকায়। লেখানোর ইচ্ছে জন হার্সিকে দিয়ে মধ্য তিরিশের হার্সি খ্যাতিমান সাংবাদিক-লেখক। টাইম ম্যাগাজিন’, ‘লাইফ’, ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’-এর মতো প্রথম সারির মার্কিন পত্রিকাগুলিতে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রবন্ধ । ১৯৪৪ সালে হার্সি-র উপন্যাস ‘আ বেল ফর আদানো পেয়েছে পুলিজার পুরস্কার। হার্সি তখন সাংহাইতে। শন তাকে একটি টেলিগ্রাম। পাঠালেন। তাতে লিখলেন ‘শন টেলিগ্রাম করেছিলেন। '৪৬-এর মার্চ মাসে। হার্সি নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় মে মাসের আগে হিরোশিমাসংক্রান্ত কাজটি শুরুই করতে পারেননি। অতঃপর হিরোশিমায় যান হার্সি। সাক্ষাঙ্কার নেন সার্ভাইভার বা উত্তরজীবীদের। তার প্রধান লক্ষ্য, পারমাণবিক বোমার প্রভাবে বিপর্যস্ত জীবনের প্রকৃত চিত্র বের করে আনা I felt I would | like to write about what happened not to buildings but to human beings.
কিয়োশি তানিমোতো-সহ ছ’জন বোমা-উত্তরজীবীর কথায়-সাক্ষাঙ্কারের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হলো। হার্সি-র দীর্ঘ রচনা ‘আ নয়েজলেস ফ্ল্যাশ। প্রকাশিত হলো '৪৬ সালের আগস্ট মাসে। স্মরণীয় হয়ে থাকল ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকার সেই সংখ্যাটিও। কারণ, হার্সির সমগ্র রচনাটিকে একটি সংখ্যায় ধরানোর জন্য, তখনও পর্যন্ত পত্রিকাটির ইতিহাসে সেবারই প্রথম। অন্যান্য সমস্ত নিয়মিত বিভাগের প্রকাশ বন্ধ রাখা হয়! বিপুল আলোড়ন ফেলে হার্সির লেখাটি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ‘হিরোশিমা নাম দিয়ে। প্রকাশের পর থেকে তিন মিলিয়নেরও বেশি। কপি বিক্রি হয়েছে গ্রন্থটি। অনুসন্ধানমূলক-সাংবাদিকতার নিদর্শন হিসেবে তথা হিরোশিমা সম্পর্কিত অজস্র। লেখালিখির ভিড়ে আজও এক আলোকবর্তিকার মতো। জন হার্সি-র ‘হিরোশিমা’ ।
পুলিজার পুরস্করিজয়ী আমেরিকান সাহিত্যিক, সাংবাদিক জন রিচার্ড হাসির জন্ম ১৯১৪ সালের ১৭ জুন, চীনে। দশ বছর বয়সে হার্সি বাবা-মার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৩৭ সালে তিনি ‘টাইম ম্যাগাজিন’-এ যোগ দেন।। যুদ্ধের পর, ১৯৪৫-১৯৪৬ সালে হার্সি ‘দ্য নিউইয়র্কার'-এর জন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনঃনির্মাণের উপর প্রবন্ধ লিখতে জাপান সফর করেন। সেখানে হিরোশিমার পারমাণবিক বোমার আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া এক খ্রিস্টান পাদ্রি কর্তৃক লিখিত দলিল তার হাতে আসে। এরপরই জাপান থেকে ফিরে তিনি লিখেন তার বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘হিরোশিমা’, যা তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। জন হার্সি ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত তার ‘অ্যা বেল ফর আদানো’ উপন্যাসের জন্য ১৯৪৫ সালে পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন। পাঁচ দশকের লেখকজীবন অতিবাহিত করার পর ২৪ মার্চ, ১৯৯৩ সালে ৭৮ বছর বয়সে ফ্লোরিডায় হার্সি’র প্রয়াণ ঘটে।