ভূমিকা নয় কৈফিয়ত: এখন ২০০৬, বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা। এ অবস্থায় আমি এ বইটি লিখছি। এখন আমার লেখা নিয়ে কেউ বলতে পারবে না যে, আমি পদ বা ক্ষমতার লোভে বইটি লিখছি। আমি আওয়ামী লীগারও নই যে, বই লিখলে বড় কিছু হতে পারব। তবু লিখলাম এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়। কারণ বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তি। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, 'দুর্দিনে যে লোক আমার পাশে দাঁড়াবে সে হলো আমার সত্যিকার বন্ধু। আমি জানি এ উক্তিটি আওয়ামী লীগপ্রধান মহীয়সী নেত্রী শেখ হাসিনা ভালোভাবে অবগত। দুর্দিনে আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়ে আমি আওয়ামী লীগের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে নিজেকে প্রতীয়মান করতে চাই। বিনিময়? বন্ধুত্বের আবার কিসের বিনিময়! আমি এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা ৩৮৪টি বইয়ের সন্ধান পেয়েছি। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব বই নিজের সংগ্রহে আনতে পারিনি। বাজারে প্রচলিত বইগুলোর বিষয়বস্তু প্রধানত বঙ্গবন্ধুর মাহাত্ম্য, দেশপ্রেম, আন্দোলন, সংগ্রাম, রাজনীতি, শাহাদাত, শাসননীতি, পররাষ্ট্রনীতি, ছাত্ররাজনীতি, জেল জীবন, ব্যক্তি জীবন ইত্যাদি অনুষঙ্গকে ঘিরে আবর্তিত। কী জাতির জনক কার অনুগ্রহে এত মহান হতে পারলেন, কার কাছ থেকে যথাসময়ে সুচারু নির্দেশাবলি পেতেন, কাকে তিনি তাঁর একমাত্র নির্দেশক মনে করতেন, সর্বোপরি মুসলমান হিসেবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, মানুষ হিসেবে মানবীয় ঔদার্য ও ঈমানি মাধুর্যের ওপর পূর্ণাঙ্গ কোনো গ্রন্থ আমি পাইনি। ২০০১-এর নির্বাচনের পর এক সভায় শেখ হাসিনা তাঁর দলের সাবেক মন্ত্রী ও নেতাদের উদ্দেশে আক্ষেপমূলক এক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, আমার শাসনামলের উন্নয়ন বিবরণ সম্পর্কিত গ্রন্থটি কয়জন পড়েছেন বলেন তো? কেউ উত্তর দিতে পারেননি, বলতে পারেননি নেত্রী আমি পড়েছি। আসলে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু কত ঐতিহ্য আর সফলতার অধিকারী তার এক সহস্রাংশও যদি জনগণকে জ্ঞাত করানো যেত, তাহলে আওয়ামী লীগকে একদিনের জন্যও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে হতো না। লীগের নেতা-কর্মীরা মূলত বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা আর আওয়ামী লীগের সফলতার সোনালি পাখায় ভর করে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু এর সঙ্গে নবপ্রজন্মকে একাত্ম করা যে সবচেয়ে জরুরি এটি কেন আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করছে না তা বোধগম্য নয়। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও গৃহীত কৌশল প্রকৃত অর্থে কার্যকর বলে মনে হয় না। আধুনিক যুগে এটি খুবই জরুরি। বাংলাদেশের জনগণ অতীব ধর্মভীরু, তাই ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি স্বভাবতই দুর্বল। ধার্মিক নেতা হলে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উজাড় করে দেয় সব। আমি গবেষণা করে দেখেছি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধার্মিক। তার সার্বিক কর্মকাণ্ডের প্রতিটি অণু ইসলামি আদর্শের প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে ইসলামি আদর্শের পরিপন্থি কোনো কাজ করেননি। তিনিই প্রথম নেতা, যিনি উপমহাদেশে প্রকৃত ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি প্রত্যেকটি ইসলামি অনুশাসন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন। কিন্তু সাধারণ জনগণ ও নবপ্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর এ দিকটার বিষয়ে প্রায় অজ্ঞ। তাই নবপ্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বঙ্গবন্ধুর ইসলামি চেতনার সুবিশাল মাহাত্ম্যকে তুলে ধরার জন্য আমি গ্রন্থটি রচনা করার উদ্যোগ নিই।