"শ্রী শ্রী চণ্ডী" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ সত্ত্ব, রজঃ আর তমঃ—এই তিনটি গুণের তারতম্য অনুসারে মানুষের স্বভাবের পার্থক্য হয়ে থাকে। সত্ত্বগণের প্রাধান্য যাঁর মধ্যে, তাঁর স্বভাব হয় শান্ত, চিত্ত থাকে স্থির, আর ভক্তি, প্রীতি, শ্রদ্ধায় অন্তর থাকে অবিচল। রজোগণ যাঁর মধ্যে প্রবল, তিনি হন কর্মঠ, তাঁর থাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাভূত করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়াস। তৃতীয় তমােগুণ—জড়তা, আলস্য, কাপুরুষতা, কুরচি, কুপ্রবৃত্তি ইত্যাদি এর লক্ষণ। আমাদের গীতা, ভাগবত ইত্যাদি সকল শাস্ত্রই সত্ত্বগণের প্রশংসায় মুখর। সাত্ত্বিক ভাবের প্রতি শ্রদ্ধাও জনগণের অত্যধিক। কিন্তু প্রকৃত সত্ত্বগুণের অধিকারী হওয়া বড়ই কঠিন, বহুদিনের সাধনা সাপেক্ষ। সাধারণতঃ যাঁদের আমরা সাত্ত্বিক বলে মনে করি, তাঁদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, সাত্ত্বিকতার ছদ্মবেশে বহ, তামসিক প্রবৃত্তি তার মধ্যে লুকিয়ে আছে। বাইরে থেকে যাঁকে শান্ত মনে হয়, তাঁর শান্তভাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অলসতা, ভীরতা, জড়তা। কারণ অলসের শান্তভাব আর সাত্ত্বিকের শান্তভাব বাইরে থেকে দেখতে একরকম। যাঁকে দেখলাম সাত্ত্বিকের মত দজ্জনকে ক্ষমা করতে, আসলে তাঁর ক্ষমা হয়তাে নিবীর্যের অসহায়তা। সংসারে সেইজন্যে তমােভাব অধিকাংশ সময় একটা নিস্ক্রিয় জড় সাত্ত্বিকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৫ জানুয়ারি ১৯০৫ ― ২৩ জুলাই ১৯৬৩) একাধারে ছিলেন ভারতীয় বাঙালি চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার, গীতিকার, চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা এবং অন্য দিকে অনুবাদক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক এবং বেতারের অনুষ্ঠান সঞ্চালক। ... শিশু সাহিত্যে তার অবদান ছিল বিশেষভাবে স্মরণীয়।