"প্রাচীন প্যালেস্টাইন" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ নির্যাতনের অসহনীয় জন্ম-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জাতি হিসাবে হিব্রু জাতির প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল তিন সহস্রাধিক বছর পূর্বে, যখন ঘটেছিল মােজেসের নেতৃত্বে প্রবাসভূমি মিশর থেকে তাদের নিষ্ক্রমণ, যখন তারা জোসুয়ার বাহুবল প্রভাবে প্যালেস্টাইনে গিয়ে রাষ্ট্রগঠন করতে সমর্থ হয়েছিল। সেই পুরনাে নাটকেরই পুনরভিনয় চলেছে সাম্প্রতিক কালে আমাদের চোখের সামনে, পরম বিস্ময়কর নাটক, যার পরিসমাপ্তি হয়তাে বা এখনাে হয়নি। দু-হাজার বছর ধরে দূর প্রবাসে ইহুদিরা অশেষ দুর্গতি ভােগ করেছে, যেমন দুর্ভোগ হয়েছিল তাদের মিশরে তার চেয়েও শতগুণ অধিক অত্যাচার, অবিচার, শােষণ, পেষণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে শুরু হয়েছিল ইউরােপ থেকে ইহুদিদের নিষ্ক্রমণ, তার জের চলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও, সেই বাইবেল-বর্ণিত একসােডাসে’র মতই ঘরছাড়ার গৃহে প্রত্যাবর্তন, যার স্মৃতি-তর্পণ চিরদিন করে এসেছে তারা ধ্যানে জ্ঞানে, শয়নে স্বপনে। দলে দলে তারা প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করল, অনুপ্রবেশও করল, তাদের ধর্মরাজ্য জাতীয় রাষ্ট্র-সংপ্রতিষ্ঠার জন্য। যে জাতির দেশ ছিল না, রাষ্ট্র ছিল না, এমন কি যার ভাষা পর্যন্ত লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সেই সর্বহারা গােষ্ঠী দেশ পেল, রাষ্ট্রও গড়ে তুলল, অসামান্য সাধনার ফলশ্রুতিরূপে। ইসরায়েল এখন একটি ‘নেশন', তার জাতীয় ভাষা হিব্রু। ইসরায়েল এই নবজাতক একটি সত্যকার অঘটন, যুগপৎ যা বিস্ময় ও রােমাঞ্চের সঞ্চার করে, এমন অপূর্ব কাহিনী হিব্রু জাতির প্রাচীন ইতিহাসের ভূমিকায় সবিস্তারে বলতে বােধ করি দ্বিধা করবার কোন কারণই নেই। প্রসঙ্গত শুধু এইটুকু বলা আবশ্যক যে ‘নেশন’রূপে ইহুদির স্বাধীন সত্তা নতুন হলেও, জাতীয়তা তারা কোনদিন হারায় নি, আর কালে কালে কুসংস্কারের পর্বতপ্রমাণ আবর্জনা-সঞ্চয়ের তলে প্রাচীন সংস্কৃতিকে তারা অক্ষুন্নই রেখেছিল, যেজন্য তাদের সমুখানকে প্রাচীনেরই পূর্বানুবৃত্তি বলে ধরে নেওয়া চলে। তা ছাড়া, জাতীয় সংস্কৃতির সংকীর্ণ পথে বিচরণের শুভাশুভ পরিণাম নির্ণয়ের একটি পরীক্ষা-ক্ষেত্র এই নব-প্রতিষ্ঠিত ইসরায়েল। প্রতিকূল অবস্থার ঘনঘটা কাটিয়ে এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র যদি বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রগতির সঙ্গে সমান ধাপে এগিয়ে দেশের ও জগতের ইষ্ট বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়, তবেই তাদের এই বিপুল কৃচ্ছ সাধনের সার্থকতা প্রতিপন্ন হবে।