"জান্নাতী ২৭ মহিলা" বইটির 'যা বলা প্রয়োজন' অংশ থেকে নেয়াঃ মহান আল্লাহপাক তাঁর ইবাদতের জন্য মানব ও জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। এদের মধ্যে মানব জাতিই সর্বশ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহপাকের সৃষ্টির প্রকাশ মানুষের মাধ্যমেই হয়েছে। তাই মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয়। মানুষ জাতির মধ্যে বিশেষ কিছু ব্যক্তিত্ব আছে যারা দুনিয়ায় অমর হয়ে আছেন। যাদের নাম মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এরা মহান আল্লাহপাকের আশির্বাদপুষ্ট। এদেরই কয়েকজন মহিয়সী নারীর জীবনী সম্পর্কে কিছু কিছু আলােচনা করছি। মহান আল্লাহপাক যে ক’জন মহিয়সী নারী মর্যাদা সম্পর্কে কোরআনে বর্ণনা করেছেন তারা জান্নাতী বলেই গণ্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিশেষ করে কয়েকজনের নাম আল্লাহপাক সরাসরি কুরআনে ঘােষণা করেছেন। এ হিসেবে আমরা ২৭ জন মহিয়সী নারীকে বেছে নিয়েছি। যারা নিশ্চিতভাবে জান্নাতী হবেন। এ ২৭ জন মহিয়সী নারীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আমরা ‘জান্নাতী ২৭ মহিলা’ নামক গ্রন্থ রচনা করতে প্রয়াস পেয়েছি। এ গ্রন্থের ধরাবাহিকতা হিসেবে হযরত বিবি হাওয়াকে আমরা সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছি, মাঝে অন্যান্য নবী (আ) গণের স্ত্রীগণকে, উম্মাহাতুল মুমিনীনদের, নবী নন্দিনী হযরত যয়নব (রা), হযরত রুকাইয়া (রা), হযরত উম্মে কুলছুম (রা), ফাতিমা (রা)সহ কয়েকজন মহিলা সাহাবির দিয়ে গ্রন্থটির সমাপ্ত টেনেছি। এখানে যে ২৭ জন মহিয়সী মহিলাকে ধারাবাহিকভাবে সন্নিবেশ করা হয়েছে তাতে এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, কে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন আর কার মর্যাদা কম। এটা মহান আল্লাহপাকই নির্ধারণ করে রেখেছেন। এ গ্রন্থে এমন অনেক কিছু সংযােজন করা হয়েছে যা অনেকেই অবগত ছিলেন না। মহান আল্লাহপাক হযরত জিব্রাইল (আ)-এর মারফত হযরত মরিয়মকে সংবাদ দিলেন যে তার গর্ভে একজন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। এ সংবাদ শুনে হযরত মরিয়মের যে অবস্থা হয়েছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। আর স্বামী ব্যতীত কুমারী মেয়েদের সন্তান হওয়া অসম্ভব ব্যাপার, আর পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা আর একটিও ঘটেনি। কিন্তু আল্লাহপাকের যা ইচ্ছা তা হবেই এবং হযরত মরিয়ম গর্ভবতী হলেন এবং একজন নবীর মাতা হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন কাজেই তিনি জান্নাতী। হযরত আছিয়া যদিও কাফের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন, তবুও তিনি হযরত মূসা (আ)-এর দ্বীনের প্রতি অটল ছিলেন। তাঁকে কাফের ফেরাউন অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করে। তবুও তিনি আল্লাহপাকের প্রতি অটল ছিলেন। হযরত আছিয়ার কথা হাদীসে বর্ণিত আছে। সে হিসেবে তিনি জান্নাতী। হযরত হাজেরা ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর স্ত্রী ও হযরত ইসমাইল (আ)-এর মাতা। তার কারণেই জমজম কূপের সৃষ্টি হয়েছে, কাবা ঘর মক্কায় স্থাপিত হয়ে সারা দুনিয়ায় সম্মানিত হয়েছে। তিনি যে কত অধিক মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তা ধারণা করা কঠিন। তিনি একাধারে একজন নবী (আ)-এর স্ত্রী এবং অন্যদিকে নবী (আ)-এর মাতা। কাজেই তিনি যে জানাতী হবেন এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকতে পারে না। আর যারা নবী (আ)-এর স্ত্রী হয়েও জাহান্নামী হয়েছে তাদের ব্যাপারে আল্লাহপাক কোরআনে বর্ণনা করেছেন। তারা হলাে হযরত নূহ (আ)এর স্ত্রী ও হযরত লূত (আ)-এর স্ত্রী। হযরত রহিমা ছিলেন হযরত আইউব (আ)-এর স্ত্রী। তিনিও একজন নবী (আ)-এর নাতনী এবং একজন নবী (আ) স্ত্রী। এ হিসেবে তার মর্যাদা খাট করে দেখার কোনাে অবকাশ নেই। হযরত আইউব (আ) আঠার বছর দুরারােগ্য অসুখে পড়েছিলেন। হযরত রহিমা কিভাবে তার সেবা-যত্ন করেছেন তারই কিছু সংক্ষিপ্ত বিবরণ এ বইতে দেয়া হয়েছে। তার ব্যাপারে আল্লাহপাক অহী নাযিল করেছেন। কাজেই তিনি যে জান্নাতী এ ব্যাপারে কোনাে সন্দেহ থাকতে পারে না।.. উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা (রা) এবং হযরত আয়েশা (রা), তাঁদের কথা নতুন করে বলা নিষ্প্রয়ােজন। প্রত্যেক মুসলমান তাদের বিষয়ে অবগত আছেন, ইসলাম প্রচারে তাদের কতটুকু অবদান রয়েছে। হযরত খাদিজা (রা)-এর সমস্ত সম্পদ ইসলামের খেদমতে হযরত রাসূলুল্লাহ আলাই-এর হাতে অর্পণ করেন। আর হযরত আয়েশা (রা)-এর ঘরে হযরত জিব্রাঈল (আ) ওহী নিয়ে আসতেন। অন্যান্য উম্মাহাতুন মুমিনীনদের মর্যাদাকে খাট করে দেখার অবকাশ নেই। আর উম্মাহাতুল মুমিনীন হিসেবে তারা সবাই জানাতী হবেন এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই। " নবী নন্দিনীগণ হযরত যয়নব (রা), হযরত রুকাইয়া (রা), হযরত উম্মে কুলছুম (রা) আখেরী নবী হযরত রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর পরিবার ও সন্তান-সন্ততি, এদের সম্বন্ধে কিছুই বলার নেই। কারণ তাদের জানে না এমন রাসূল প্রেমিক কেউ নেই। নবী নন্দিনী হযরত ফাতিমা (রা)-এর কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। হযরত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ফাতিমা আমার কলিজার টুকরা। যে ফাতিমাকে কষ্ট দিবে সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল। তিনি আরও বলেছেন, হযরত ফাতিমা (রা) বেহেশতের নারীগণের সর্দার হবেন। আর হযরত ফাতিমা (রা)-এর দু’সন্তান হযরত হাসান (রা) এবং হুসাইন (রা) জান্নাতের যুবকদের সর্দার হবেন। কাজেই এ কথা অনুমেয় যে, হযরত ফাতিমা (রা) কত বেশি মর্যাদাবান। তাঁর বিয়ে হয়েছিল বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত খােলাফায়ে রাশেদার চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা)এর সাথে। এ বিয়ে আল্লাহপাকের নির্দেশক্রমেই হয়েছিল। হযরত রাসূল এলাহ-এর ইন্তে কালের পর প্রথম তার পরিবার-পরিজনের মধ্যে হযরত ফাতিমা (রা)-ই সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেন। বিভিন্ন বিষয় পর্যালােচনা করে দেখলে হযরত ফাতিমা (রা)-এর মর্যাদা সম্পর্কে উপলব্ধি করা যায়। কাজেই তিনি যে জান্নাতী একথা বলে আমরা তার মর্যাদা খাট করতে চাই না। তিনি আরও উপরের স্তরের মর্যাদাবান। এরপর নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেছেন- প্রত্যেক সাহাবি নক্ষত্র সমতুল্য। যারা আমার সাথে ইসলামের খেদমত করেছে তারা বেহেশতি, যারা আমাকে দেখেছে অথচ আমি তাদের চিনে রাখিনি তারাও বেহেশতি। ঠিক সে রকম মহিলা সাহাবির কয়েকজনের জীবনী এখানে উল্লেখ করেছি। আমাদের প্রকাশিত ‘জান্নাতী ২৭ মহিলা’ বইখানা পাঠক সমাজের নিকট সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পাঠক সমাজ এ বইখানা থেকে তাদের জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবগত হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন। আমরা যতটুকু তাদের জীবন সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছি তা সংযােজন করা হয়েছে। তাদের জীবনের আরও অনেক দিক রয়েছে হয়তাে তা আমরা অবগত নই।
মাওলানা মুনীরুল ইসলাম ১৯৮০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার খামারগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নব্বই দশকের শুরুর দিকে ক্যাম্পাসের বড় ভাইদের দেয়ালিকা লেখা দেখতে দেখতে তিনি লেখতে শুরু করেন। তৎকালীন মাসিক জাগো মুজাহিদ-এর জানুয়ারি-১৯৯৫ সংখ্যায় ছাপার হরফে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। তার লেখা গ্রন্থের সংখ্যা ৪০টির মতো। সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় তার বিচরণ রয়েছে। তবে আকাবির ও ইতিহাসের গল্প চমৎকার মুনশিয়ানার সঙ্গে উঠে আসে তার কলমে। ‘জীবন গড়ো সিরিজ’ ও ‘খোশবু সিরিজ’-এ লিখেছেন ছোটদের জন্য চমৎকার কিছু বই। ছড়া-কবিতার প্রতি রয়েছে আলাদা ঝোঁক। ইসলামি সংগীত রচনায়ও তার দখল রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর কয়েকটি অ্যালবামে তার সংগীত রিলিজ হয়েছে এবং শ্রোতামহলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। লেখালেখিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি মাসিক আদর্শ নারী লেখক সম্মাননা-২০১২; সত্যের সন্ধানে লেখক সম্মাননা-২০১৫, কাব্যকথা জাতীয় সাহিত্য পদক-২০১৫, আমরা এক কাফেলা লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সম্মাননা-২০২১ সহ অনেক পুরস্কার ও সনদ লাভ করেছেন। তিনি ২০০১ সালে বেফাকের অধীনে জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলূম কুমিল্লা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ২০০৪ সালে সোনাকান্দা দারুল হুদা বহুমুখী কামিল মাদরাসা কুমিল্লা থেকে কামিল [মাস্টার্স] সম্পন্ন করেন। এছাড়াও লেখালেখি ও সাংবাদিকতা বিষয়ক বিভিন্ন কোর্স ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন। এক যুগেরও বেশি সময় তিনি মাসিক আদর্শ নারী’র সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখি, সম্পাদনা এবং শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি লেখকপত্রের নির্বাহী সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক। বইপত্র সম্পাদনা ও প্রকাশের ঠিকানা সম্পাদনা কেন্দ্রে’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকও তিনি।