"বিশ শতকের বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বাঙালি জীবনে বিশ শতক এসেছিল স্বদেশীয়ানার উত্তাপ সর্বাঙ্গে মেখে। বিদেশীর অধীনতা পাশ থেমে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন বিশ শতকের বাঙালি। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিয়েছিলেন তারা। এই শতকেই সাম্যবাদী চিন্তাধারা বাঙালিকে নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদের বীভৎস চেহারা এইকালেই বাঙালির চোখের সামনে ফুটে উঠল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আঁচ এসে লাগল বাঙালিজীবনে। জ্বলে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যেতে লাগল তার মূল্যবােধ। কলকাতায় বােমা পড়ল। প্রাণ ভয়ে পালাতে লাগল লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিশ্বযুদ্ধের সময়েই মানুষের সৃষ্ট মন্বন্তরে অনাহারে অবহেলায় বাংলার সর্বত্র মৃতদেহের পাহাড় তৈরি হল। স্বাধীনতা এল। কিন্তু বড় মর্মান্তিকভাবে। বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি ঘটল বিশ শতকের মাঝামাঝি। দেশভাগ হল। হিন্দু-মুসলমান মাতল আত্মঘাতী সংঘর্ষে। বাস্তুচ্যুত অসংখ্য মানুষের চোখের জলে দুই বাংলার মাটি উঠল ভিজে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট বাঙালি জীবনকে গ্রাস করল। বাঁচার তাগিদে মেয়েদের বেরােতে হল জীবিকার সন্ধানে। বিশ শতকে বাঙালি জীবন আর চেনা মহলের মধ্যে আবদ্ধ থাকল না। শুধু নাগরিক জীবন-ই নয়, গ্রাম বাংলার রূপও বদলে যেতে লাগল।
স্বপন বসুর জন্ম ও পড়াশােনা কলকাতায়। পড়িয়েছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর চর্চার নিয়মিত বিষয় উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস। উল্লেখযােগ্য বই– বাংলায় নবচেতনার ইতিহাস (১৮২৬-৫৬), সতী, গণঅসন্তোষ ও উনিশ শতকের বাঙালিসমাজ, সমকালে বিদ্যাসাগর প্রভৃতি। সংবাদ-সাময়িকপত্রে উনিশ শতকের বাঙালিসমাজ নামে একটি গবেষণাপ্রকল্পে কর্মরত, যার প্রথম দুটি খন্ড ইতিমধ্যেই প্রকাশিত, তৃতীয়টি প্রকাশের অপেক্ষায়। এর পাশাপাশি উনিশ শতকের বাংলা সংবাদসাময়িকপত্রের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার কাজও করে চলেছেন। বর্তমানে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির কর্মপরিষদের সদস্য।