মাইকেল মধুসূদন দত্তের তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত) একাঢ পরীক্ষামূলক কাব্য- পরীক্ষা ভাষার দিক থেকে অর্থাৎ শব্দ ব্যবহারের দিক থেকে এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দের নবলব্ধ রীতি-প্রকরণের দিক থেকে। যদিও একসময় বাংলাভাষায় নতুন কাব্য ধারার সূত্রপাত হিসেবে এ-কাব্যটিকে বিবেচনা করা হয়েছে, ১ কিন্তু বর্তমানে মেঘনাদবধ কাব্যকেই উনিশ শতকের জীবনচেতনার স্মারক গ্রন্থ হিসেবে আমরা গ্রহণ করেছি। ভাবের দিক থেকে অর্থাৎ বিষয়বিন্যাসে তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য তার প্রকাশকালে একটি নতুন মাধুর্য পাঠকের চিত্তে সঞ্চারিত করেছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু পরবর্তী পরীক্ষায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে এখন আর তা বিবেচিত হচ্ছে না। মোহিতলাল মজুমদারের কথায় এ-কাব্যে কবি কল্পনার একটি মুক্তি-সুখ আস্বাদন করতে ব্যাকুল ছিলেন।২ আমি বর্তমান প্রবন্ধে অমিত্রাক্ষর ছন্দের রীতি প্রকরণের পরীক্ষার দিক থেকে তিলোত্তমাসম্ভব কাব্যের উল্লেখযোগ্যতা বিচার করবো। মধুসূদন বাংলা কবিতার ছন্দ নিয়ে অনেক চিন্তা করেছেন। তাঁর বিভিন্ন চিঠিতে এর পরিচয় আছে। তিলোত্তমাসম্ভব রচনাকালে বাংলা পয়ারের স্বভাব এবং সেই স্বভাবের বাধ্যতায় কবিতার মধ্যে যে একটি অলস ক্লান্ত ভঙ্গি উপস্থিত হয়েছিল, মধুসূদন তার জন্য অসম্ভবরকম চিন্তিত ছিলেন। তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য বাংলা পয়ারের গতানুগতিক ভঙ্গির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
Syed Ali Ahsan (২৬শে মার্চ, ১৯২২ - ২৫শে জুলাই, ২০০২) বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক, কবি, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। তিনি তাঁর পাণ্ডিত্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। সৈয়দ আলী আহসান কৃত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের ইংরেজি অনুবাদ সরকারি ভাষান্তর হিসাবে স্বীকৃত। পুরোনো ঢাকা শহরের আরমানিটোলায় অবস্থিত আরমানিটোলা সরকারি হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স (এসএসসি) এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে এফএ (এইচএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক (বিএ)এবং ১৯৪৪ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা চলে যান। সেখানেই বিয়ে করেন ৭ জুলাই, ১৯৪৬। অত:পর যথাক্রমে অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্রে এবং রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে কর্মসূচি নিয়ামকরূপে চাকরি করেছেন। তিনি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আলী আহসান করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর পরিচালক (প্রধান নির্বাহী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পুনরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।