“খৃষ্টধর্মের স্বরূপ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ পাঁচ বছর আগের কথা। হযরত মাওলানা রহমাতুল্লাহ কীরানবী (রহ.) রচিত ‘ইজহারুল হক’ শীর্ষক গ্রন্থখানির উর্দু তরজমা যখন অধম বান্দার টীকা-টিপ্পনীসহ বাইবেল সে কুরআন তাক’ নামে প্রকাশ করা হয়, তখন তার একটি বিশদ ভূমিকা লেখা হয়েছিল। বান্দা তাতে খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে তার দীর্ঘ চার বছরব্যাপী পড়াশুনার নির্যাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। ভূমিকাটি উপযুক্ত গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের শুরুতে মুদ্রিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলার ফযল ও করমে আমার সে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বিজ্ঞ মহলে আশাতীত সমাদর লাভ করেছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সে সম্পর্কে প্রণােদনামূলক সমীক্ষা ছাপা হয়েছে। উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম তার অনুকূলে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে অসামান্য সাহস জুগিয়েছেন। গুরুজন ও বন্ধুবর্গের অনেকেরই অভিমত, নিবন্ধটি স্বতন্ত্র পুস্তকাকারে প্রকাশ করলে মানুষের অনেক বেশি উপকার হবে। সত্য বলতে কি তিন খণ্ডে সমাপ্ত বাইবেল সে কুরআন তাক’-এর মত এত বড় গ্রন্থ সকলের জন্য উপযােগীও নয়। প্রত্যেকের পক্ষে এর দ্বারা উপকৃত হওয়া কঠিন ব্যাপার। সুতরাং শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মুহাম্মাদ রাফী উছমানী সাহেব অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন, 'দারুল ইশাআত’ থেকে এ নিবন্ধটি স্বতন্ত্র পুস্তকরূপে প্রকাশ করবেন। এই অবকাশে আমি নিবন্ধটির সাদামাঠা সম্পাদনা করে দিয়েছি। কোথাও মামুলি সংশােধনও করেছি। বার্নাবাসের ইনজীল’ সম্পর্কে এ নগণ্যের একটি পর্যালােচনামূলক প্রবন্ধও এ পুস্তকের শেষে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা বাইবেল সে কুরআন তাক’-এর তৃতীয় খণ্ডে একটি টীকারূপে মুদ্রিত হয়েছিল। প্রবন্ধটি সংযােজন করা হয়েছে এ কারণে যে, এ বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে এমন কিছু বিষয় আছে, যা এ প্রবন্ধের আলােকে অধিকতর স্পষ্ট হতে পারে। এই মামুলি সংশােধন ও সংযােজনের সাথে বইখানি এখন আপনার সামনে বর্তমান। আল্লাহ তাআলা এই নগণ্য শ্রমটুকু কবুল করে নিন এবং একে লেখক ও প্রকাশক উভয়ের জন্য আখেরাতের পুঁজি বানিয়ে দিন- আমীন।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।