"বিবাহ ও তালাক" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: বিবাহের আহকাম, আদব, খুতবার তাৎপর্য প্রচলিত রসম-রেওয়াজ ও তালাকের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে এই বইতে। বিবাহের খুতবা পড়ার সময় মনে হল সময়গাচিত বিষয় হিসেবে এবং সমাজের প্রয়ােজনের দিকে লক্ষ করে বিবাহের খুত্ব সম্পর্কে আজ কিছুটা আললাচনা হয়ে যাক। কেননা, এই যে খুতবাটি প্রতিটি বিবাহের সময় পড়া হয়, এর এক মহান উদ্দেশ্য আছে। সাধারণভাবে আমরা সে উদ্দেশ্যটি ভুলে গেছি। বরং বিবাহের খুতবা পড়া তথাকথিত এক রসমে পরিণত হয়ে গেছে। বিবাহের অনুষ্ঠানে বিবাহ পড়ানাের জন্য কাউকে ডেকে আনা হয়। সে খুতবার বাক্যসমূহ পাঠ করে আর সকলে শুনে নেয়। ব্যস হয়ে গেল। অথচ পূর্ণ খুতবাটি এবং এতে যে আয়াতসমূহ পড়া হয়, তার একটি বড় উদ্দেশ্য আছে। তাতে আমাদের সকলের জন্য বিবাহ সম্পর্কে তাে বটেই, সেই সংগে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্র সম্পর্কেও অতি মূল্যবান শিক্ষা রয়েছে এবং রয়েছে। অনেক বড় বার্তা। নবীযুগে বিবাহকালীন নসীহত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে নিয়ম ছিল, তিনি যখন বিবাহের খুতবা দিতেন তখন উপদেশমূলক কিছু কথাও বলতেন। বর্তমানে উপদেশের সে নিয়ম পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। খুবার মাসনূন (সুন্নতসম্মত) আয়াতসমূহ পড়েই ক্ষান্ত করা হয়। তাই আজ এ খুবার প্রাণবস্তু ও মর্মকথা ভালােভাবে বুঝে নেওয়ার প্রয়ােজন বড় বেশি।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।