একটি আদিম, সরল, পরিশ্রমী ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনজাতি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য কীভাবে দুঃসাহসিক সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ইতিহাসের অবজ্ঞাত সভ্যতার আলোকবঞ্চিত আদিবাসী মানুষের রচনা করা সত্যিকারের ইতিহাস অবলম্বন করেই তারাশঙ্কর রচনা করেছেন 'অরণ্য-বহ্নি' উপন্যাস। সাঁওতালরাই এই উপন্যাসের প্রধান কুশীলব। সাঁওতালদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, চিন্তাচেতনা, জীবনধারা, পারিবারিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান।' এ সমস্ত কিছুর সঙ্গে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গভীর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পৃক্ততা ছিল। এ কারণেই তারাশঙ্কর সাঁওতালদের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার স্পৃহা নিয়ে রচনা করলেন এই ঐতিহাসিক উপন্যাস। ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কের বর্ণনায়-'সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধ সুশৃঙ্খল সমবায়ী এক জনগোষ্ঠী। আরণ্যক জীবনের ধর্ম অনুযায়ী তারা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত। কৃষ্ণকায় সাঁওতাল আদিবাসীরা দুর্দান্ত পরিশ্রমী, সাহসী, সত্যবাদী এবং সরল। অরণ্যচারী এই জনগোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান অবলম্বন কৃষিকাজ। শিকারের ক্ষেত্রেও সাঁওতালদের রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। পরিশ্রমের জন্য তাদের সুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। প্রাচীনকাল থেকেই সাঁওতাল সমাজে বিভিন্ন গোত্রের অস্তিত্ব ছিল। সাঁওতালদের মধ্যে মূর্মু, টুডু, হাঁসদা, হেমব্রম, সরেন, কিস্কু ইত্যাদি মোট বারোটি সাঁওতাল গোত্র বিদ্যমান।