আমার কথা ‘তোমার কাছে নত হয়েছি কবিতা’-কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর এই লাইনটি বুকের মাঝে নিত্য বাজে। মনে হয়, কবিতাকে যতখানি ভালোবাসি ততখানি যদি ধারণ করতে পারতাম ! অত মেধা আমার নেই। তবে শৈশবেই কবিতার যে বীজ আমার বাবা আমার মধ্যে পুঁতে দিয়েছিলেন সেই কবিতাকে আমি কোন দিন ছেড়ে যাইনি, ভুলে থাকিনি কোন সময়। আমার সুখে-অসুখে কবিতাকে আঁকড়ে ধরে রাখি। সব সময় যে কবিতাকে কণ্ঠে ধারণ করতে পারি এমন নয়। কবিতা যে আমার মত তুচ্ছ মানুষকে ধরা দেয় তাও নয়। দীর্ঘ দশ বৎসর আগে সম্পাদনা করেছিলাম ‘আবৃত্তি করি চল্' যাঁরা বইটি হাতে পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে অনেকে যেমন প্রশংসা করেছেন আকুণ্ঠ, সমালোচনাও করেছেন। বলেছেন, ‘এক পাতায় একটির বেশি কবিতা দিয়ে বইটির সৌন্দর্য হানি ঘটিয়েছি।' বিষয়টি আমিও বুঝেছি-এক পাতায় একটি করে কবিতা দিলে বইটি অনেক বেশি দৃষ্টি নন্দন হতো, কিন্তু কম পাতায় বেশি কবিতা দেয়ার লোভ সামলাতে পারিনি। প্রতিষ্ঠিত ঋদ্ধ খ্যাতিমান কবিদের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কবিদের এত সুন্দর সুন্দর শিশুতোষ কবিতা রয়েছে বাংলা শিশু সাহিত্যে, ইচ্ছে করছিল আরও আরও কবিতা দিয়ে বইটি শিশুদের এবং সাহিত্য প্রেমীদের হাতে তুলে দিতে; পারিনি। দশ বৎসর আগেও এই ধরনের সম্পাদিত বই খুব বেশি আমার জানার পরিধিতে ছিলো না। এখন বাজারে এই সব বইয়ের সংখ্যা অনেক। শুধু তাই নয়, অনেক সম্পাদিত বই হুবহু কপি হচ্ছে ! আবৃত্তি করি চল্ বইটিও হয়েছে। ‘আবৃত্তির জানালা'র অধিকাংশ কবিতা কবিদের মূল বই থেকে নেয়া। কবির বানান রীতি গঠনশৈলী ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। মা-বাবা, দু’বোন, বন্ধুদের তাগিদ, ক্ষুদে আবৃত্তিশিল্পী, অভিভাবকদের আগ্রহে শেষ পর্যন্ত বইটি আলোর মুখ দেখলো। আমি কৃতজ্ঞ আবৃত্তি করি চল্- এর সকল পাঠকদের কাছে, যাঁরা আমাকে উৎসাহিত করেছেন ‘আবৃত্তির জানালা' সম্পাদনা করতে। মিলি চৌধুরী