ফ্ল্যাপে লিখা কথা আন্তর্জাতিক মানরে পুষ্টিবিজ্ঞানী ডক্টর পূরবী বসুকে বাংলাদেশের মানুষ কতটুকু চেনেন তা নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে। কিন্তু পূরবী বসু নামে এক গল্পকার ও নারী-আন্দোলনবাদী মহিলাকে এদেশের বিদ্বৎ মহল ও বৃহত্তর পাঠকসমাজ নিশ্চিতভাবে চেনেন, খুবই নিশ্চিন্তে এমন কথা বলা চলে। খোঁজে নিয়ে পাঠক এও জানতে পারবেন, মুন্সীগঞ্জের বসু পরিবারের মেয়ে বৈবাহিক সমাজসংস্কারের স্বামীর পদবি গ্রহণ করলেও সৃজনীসত্তায় পিতৃকুল পরিচয় অমূল্য জ্ঞান করেছেন।
পূরবী বসু পেশার তাগিদে বহু বৎসর যাবত মার্কিন দেশে প্রবাসী। এখন বয়সের দাবি মেনে চলার বয়সে পৌঁছে পুনরায় স্বভূতিতেই ফেরার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। ‘ধলেশ্বরী মিসিসিপি’ পূরবী বসুর আত্নজীবনী চিহ্নিত গ্রন্থ। কিন্তু মেজাজ গল্পগন্থেরই।
ধলেশ্বরী পাড়ের মুন্সীগঞ্জের শহরে তাঁর জন্ম-বাল্য-কৈশোর অতিক্রান্ত। পরে আর পাকাপাকিভাবে জন্মকুটিরে কখনোই ফেরা হয় না। অভিবাসীর জীবনই কাটে ঢাকায়, নিউইয়র্কে, ডেন্ভারে-এমন বললেও অত্যুক্তি হবে না। ধলেশ্বরীর মেয়ে মিসিসিপির কন্যা হয়ে গেছে কি? হয় নি। হওয়া কি যায়? তবু জীবন তো বাঁধা পড়ে আছে এই দুই প্রান্তেরই রজ্জুতে। সে কাহিনীই এ বইয়ে গেঁথে রাখলেন পূরবী বসু।
পূরবী বসু রচনাপ্রেমী এক নির্দিষ্ট পাঠকমণ্ডলী আছে, সকলেই জানেন। তাঁরা এই বই যথোচিত উল্লাসের সঙ্গে গ্রহণ করবেন, নিঃসন্দেহে এমনটি ভাবা যায়।
পূরবী বসু বিজ্ঞানী, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক। তাঁর গল্প, প্রবন্ধাবলি ও বিবিধ রচনা নারী-ভাবনা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনায় ঋদ্ধ। মুন্সীগঞ্জের সন্তান তিনি। শহরের এক জনপ্রিয় চিকিৎসকের কন্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ করেছেন। ফার্মেসিতে অনার্সসহ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা। তারপর বিদেশ যাত্রা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। মেডিক্যাল কলেজ অভ পেনসিলভ্যানিয়া ও ইউনিভার্সিটি অভ মিসৌরি থেকে লাভ করেছেন। যথাক্রমে প্রাণ-রসায়নে এম.এস. ও পুষ্টিবিজ্ঞানে পিএইচ-ডি । বিজ্ঞানচর্চা তার পেশা। নিউইয়র্কের বিশ্ববিখ্যাত মেমােরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টার গবেষণা ও কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনায় কেটেছে বেশ কিছুকাল । অজস্র গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে সারা বিশ্বের নানা নামী জার্নালে। দীর্ঘ বিদেশবাসের পর দেশে ফিরে আসেন এক খ্যাতনামা ঔষধ প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে। দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক-এ স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকও ছিলেন পরবর্তীকালে । গত কয়েক বছরে তার নারী সম্পর্কিত রচনা নিয়ে কয়েকটি মননশীল গ্রন্থ বেরিয়েছে, যার মধ্যে নারী, সৃষ্টি ও বিজ্ঞান, ‘নােবেল বিজয়ী নারী’, ‘সাহিত্যে নােবেল বিজয়ী নারী’, ‘প্রাচ্যে পুরাতন নারী’, ‘আমার এ দেহখানি’ ও নারী, মাতৃত্ব ও সৃজনশীলতা উল্লেখযােগ্য।। তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্যে ২০০৫-এ তিনি অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১৪-এ কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।