ফ্ল্যাপে লেখা কথা লালন সাঁই-এই নামটি গভীরভাবে জড়িয়ে আছে লোকায়ত বাঙালির মরমি সাধনা, সংগীত ও জীবনের সঙ্গে। বাংলার এক ক্রান্তিকালে তিনি জন্মেছিলেন সংস্কার-জাতপাত ও শাস্ত্রশাসিত এক ধর্মান্ধ সমাজে। আপন অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও চেতনার মধ্য দিয়ে এই অনুদার পরিবেশকে অগ্রাহ্য ও অতিক্রম করে একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একই সঙ্গে আধ্যাত্নিক ও সামাজিক শক্তির অর্চনা করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন-নিগৃহীত-অবজ্ঞাত নিম্নবর্গের জনমানুষের ‘মানবগুরু’-পরমপুরুষ ‘জীবনসাঁই’।
শাস্ত্র নয়, ধর্ম নয়, ঈশ্বর নয়-লালন ভজনা করেছেন মানুষকে, শরণ নিয়েছেন মানবগুরুর -সাম্য-মৈত্রী-প্রেম-মানবতার বন্দনা ধ্বনিত হয়েছে তাঁর গানে গানে। দূরের স্বর্গ-নরকের প্রলোভন ও ভীতিকে অগ্রাহ্য করে মানবজনমকে সার্থক করার আকাঙ্ক্ষায় সমর্পিত হয়েছে ইহজাগতিতার চেতনায়।
একদিকে যেমন তাঁর গান সাধনার ভাষ্য,অপরদিকে তেমনি সমাজমনের বক্তব্য । তাঁর সেই গান উচ্চাঙ্গের তত্ত্বকথার বাহন হয়েও শিল্পপ্রতিভার গুনে তা হয়ে উঠেছে রমণীয় সংগীত-সাহিত্য। আবার লালন তাঁর সঙ্গীত-দর্শন ও মানবিক উপলব্ধির জন্যে হয়ে উঠেছেন বিশ্বজনের আদরের সামগ্রী-শান্তি-সাম্য-সম্প্রীতি-কল্যাণ-মানবতার বিশ্বপথিক।
প্রচলিত সংস্কার ও ধারণার বলয় থেকে বেরিয়ে এসে নতুন চেতনা, উপলব্ধি, তথ্য, ব্যাখ্যা ও ভাষ্যে মুক্তমনের সাধক লালনকে আবিষ্কার ও উপস্থিত করার প্রয়াস আছে ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরীর এই বই-কালান্তরের পথিক লালন-এ।
আবুল আহসান চৌধুরী জন্ম ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩ কুষ্টিয়ার মজমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স), এমএ ও পিএইচডি ৩২ বছর ধরে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দুষ্প্রাপ্য ও অজ্ঞাত উপকরণ সংগ্রহ, উদ্ধার ও তা ব্যবহার করে থাকেন। তার লালন সাঁই, কাঙ্গাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হােসেন বিষয়ক গবেষণাকাজ দেশ-বিদেশে সমাদৃত। গবেষণায় বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে । প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭০।