“চা : শিল্প ও সাহিত্য" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে চায়ের সামগ্রিক ইতিহাস নিয়ে রচিত হয়েছে চা : শিল্প ও সাহিত্য শীর্ষক বইটি। চায়ের জন্মস্থান, চা-শব্দের ব্যুৎপত্তি, চায়ের উদ্ভিদতত্ত্ব, জীবনচক্র, ভূগােল এসব বিষয় সরল-সুখপাঠ্য গদ্যে তুলে ধরেছেন। গ্রন্থকার। চায়ের অর্থনৈতিক অনুষঙ্গ হিসেবে চাচাষের ভূমিব্যবস্থা, সংগঠন ব্যবস্থাপনা, মালিকানা, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কারখানার বিবর্তন, বিপণন ব্যবস্থা, চা-মুদ্রা। প্রভৃতি বিষয় তথ্য-উপাত্তসহ উঠে এসেছে। সামাজিক ও অন্যান্য অনুষঙ্গ হিসেবে চা-শ্রমিক, বঙ্গবন্ধু ও চা-বাের্ড, টি সিমেট্রি, টি মিউজিয়াম প্রভৃতি বিষয় আলােচিত হয়েছে। চায়ের সাহিত্য বা শিল্প-অনুষঙ্গ হিসেবে বাংলা সাহিত্যের। পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের চা-বিষয়ক কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধসাহিত্য ও চিত্রকলা নিয়ে পৃথক। আলােচনাও এতে স্থান পেয়েছে। সব মিলে এটি চা-বিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। বাংলাদেশে বা সমগ্র বাংলা ভাষায় এর আগে এমন গ্রন্থ রচিত হয়নি। একাডেমিকভাবে পাঠের জন্য চায়ের চাষবাস ও বিজ্ঞানবিষয়ক কিছু বই বাংলায় লেখা হয়েছে বটে, তবে সাধারণ পাঠকের জন্য সেগুলাে ততটা কার্যকর নয়। চা উৎপাদনবিষয়ক এসব প্রয়ােজনীয় তথ্যের বাইরেও চা-সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় আছে, বর্তমান গ্রন্থটিতে যার সন্ধান মিলবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা বাের্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর জীবনের একটি বর্ণিল সময় কেটেছে চা বাের্ডকে কেন্দ্র করে। চাশিল্পে তার রয়েছে অনেক বড়াে অবদান। সে কথাও বাংলাদেশে চা-শিল্প বিকাশের ঐতিহাসিক অনুষঙ্গ হিসেবে উঠে এসেছে। উপমহাদেশের একমাত্র চা জাদুঘরটি শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। এই জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা বর্তমান গ্রন্থকার। পাঠক জানবেন সেই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার গল্পটিও।
Abul Kasem- ১ জুলাই ১৯৫৫ কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার ঝাঁকুনি-পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন শেষে সরকারি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে প্রবেশ করেন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব। ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। তখন থেকে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় তাঁর প্রবন্ধ, গবেষণাপ্রবন্ধ, ছোটগল্প, সমালোচনামূলক প্রবন্ধ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়ে আসছে। কথাসাহিত্যে তার বিচরণ বেশি। সেখানে তিনি অতীত ইতিহাসের অমীয় উপাদানের সন্ধান করেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন ইতিহাস আশ্রয়ী বাংলা সাহিত্যকে। ক্যাপ্টেন কক্স, অজেয় এবং সরহপা সে ধরনের উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কিছু বই রয়েছে তাঁর। মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা, মুক্তিযুদ্ধে জয়পুরহাটে ছাড়াও রয়েছে মুক্তির মন্দির সোপানতলের মতো হৃদয়স্পর্শীর মুক্তিযুদ্ধের গল্পের বই। ইতিহাস বইগুলো আঞ্চলিক ও জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে আছে। তাঁর গবেষণাপ্রবন্ধে সমকালীন বিশ্বসাহিত্যের একটি বিশেষ ধারার গভীরতর চিন্তাধর্মী বিষয়গুলো যেমনÑ অস্তিত্ববাদ, পরাবাস্তববাদ, চেতনাপ্রবাহরীতি, অ্যাবসার্ডিটি প্রাধান্য পেয়েছে। চা শিল্পের ইতিহাস, বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। বাংলা ভাষায় তা শুধু ব্যতিক্রমই নয়, অনন্য সাধারণও। তাঁর চা শিল্পের ইতিহাস কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০। কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদকসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।