#তাতারিদের_ইতিহাস_নতুন_সংস্করণ_২_খণ্ডে নতুন সংস্করণে ড. রাগিব সারজানির ভূমিকা ইতিহাসের অত্যন্ত মর্মান্তিক উপাখ্যান হলো তাতার বা মোঙ্গল উপাখ্যান। তাতারদের প্রতিটি যুদ্ধে নিহতের গড় হার পৃথিবীর ইতিহাসে সংঘটিত যেকোনো যুদ্ধের চেয়ে বেশি। কারণ, তারা হত্যাযজ্ঞ চালানোর ক্ষেত্রে সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকের মাঝে কোনো পার্থক্য করেনি। যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ-নির্বিশেষে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অসংখ্য বৃহদায়তন শহর সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের এমন ধ্বংসাত্মক আচরণ থেকে মুসলিম-অমুসলিম কেউই বাদ যায়নি। তাদের উত্থানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এশিয়া-ইউরোপ সব জায়গায় তারা এই ধ্বংসযজ্ঞের নির্মমতা দেখিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাতারদের ইতিহাস অত্যন্ত মর্মান্তিক এক ইতিহাস। তাতারদের সুদীর্ঘ রক্তাক্ত ইতিহাস বিভিন্ন চলচ্চিত্র, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, সংবাদমাধ্যম, গল্প-উপন্যাস ও সাহিত্যকর্মের জন্য বিপুল উৎস হিসাবে পরিণত হয়। তবে এসবের উপস্থাপনায় সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ ঘটে। বাস্তব ঘটনাগুলো কাল্পনিক ও বানোয়াট ঘটনার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ফলে ইতিহাসের বাস্তব চিত্রটি হারিয়ে যায়। এটিই ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলোকে দুর্বল এবং ইতিহাসের পাঠ ও শিক্ষা থেকে উপকৃত হওয়াকে কঠিন করে তুলেছে। তাই এমন একটি রচনার বড় প্রয়োজন ছিল, যার মধ্যে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্য ও সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলির সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হবে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার প্রতি টানটান উত্তেজনা সৃষ্টির দিকটিও সমানভাবে গুরুত্ব পাবে। বস্তুত তখনই ইতিহাস থেকে পরিপূর্ণ উপকার লাভ করা সম্ভব হবে এবং সত্য ইতিহাসটুকু আমাদের জন্য শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে পরিণত হবে। যদি আমরা উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করি, তাহলে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠকের জন্য ব্যাপকভাবে উপকৃত হওয়া সম্ভব হবে। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সে ধারার পরিশ্রমেরই ফসল। গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণের ব্যাপক সফলতা আমাকে এর পুনর্নিরীক্ষণ ও তথ্যসংযোজনে উদ্বুদ্ধ করে, যা পাঠককে ঘটনার বাস্তবচিত্র বুঝতে সাহায্য করবে। এই সংস্করণে মোট ২৮টি মানচিত্র ও পাঁচটি চিত্র সংযুক্ত করা হয়েছে, যা পাঠকের সামনে ঘটনার দৃশ্যপট স্পষ্টকরণে জোরালো ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও বইটির শেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা যুক্ত করা হয়েছে, যা আইনে জালুত যুদ্ধের পর তাতারদের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেবে এবং গোল্ডেন হোর্ড নামে পরিচিত তাতারদের একটি বড় অংশ কীভাবে ইসলাম গ্রহণ করল, তা স্পষ্ট করবে। আলোচনাটি আরও স্পষ্ট করবে উত্তরাঞ্চলীয় তাতারদের অবস্থা। বারকে খানের জীবনাচার। মুসলিমদের জন্য তার আবেগ। হালাকু খানের সঙ্গে তার শত্রুতার দৃশ্যপট এবং মামলুকদের সঙ্গে তার সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক ইত্যাদি। সবশেষে তাতার নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের আলোচনা যুক্ত করা হয়েছে। যেমন : তেকুদার, গাজান, উলজাইতু ও আবু সাইদ। গ্রন্থটিতে গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু সংযোজন হলো, নতুন সংস্করণের টীকায় এমন ৮০ জন ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী যুক্ত হয়েছে, যাদের আলোচনা এ গ্রন্থে এসেছে। এভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন পক্ষ ও ইতিহাস-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানার মাধ্যমে পাঠকের জন্য আরও ভালোভাবে ঘটনাগুলো বোঝা ও মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে। গ্রন্থটিকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দরভাবে প্রকাশ করার জন্য গ্রন্থটির মুদ্রণ, ভাষা সম্পাদনা, সূচি ও গ্রন্থসূত্র-সহ প্রতিটি বিষয় পুনর্নিরীক্ষণ করা হয়েছে। এ সকল সম্পাদনা সত্ত্বেও বড় একটি কাজ বাকি রয়ে গেছে। সেটা হলো, বিশ্বব্যাপী তাতারদের ধ্বংসযজ্ঞের ঢেউ থামিয়ে তাদের ওপর জয়লাভকারী মামলুকদের ইতিহাস পূর্ণরূপে লিপিবদ্ধ করা। তবে এর জন্য একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থের প্রয়োজন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাকে এই কাজটি সম্পন্ন করার সময় ও সুযোগ দান করেন। আমিন। ⸺ড. রাগিব সারজানি কায়রো, মিশর ১৪ নভেম্বর ২০২০
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন জন্ম ২০ নভেম্বর ১৯৬৭, মুন্সীগঞ্জ দাওরায়ে হাদীস ও আরবি সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি, দারুল উলুম দেওবন্দ পেশা : শিক্ষকতা প্রিয় শহর : মক্কা মুকাররামা ও মদীনা মুনাওয়ারা। উল্লেখযােগ্য মৌলিক গ্রন্থ ত্রিভুবনের প্রিয় মুহমদ (সা.), ভয়-স্বপ্ন সংগ্রাম, নারীর শত্রু মিত্র, সাহসের গল্প, সাহিত্যের ক্লাস, বক্তৃতার ক্লাস, ইসলামে জীবিকার নিরাপত্তা, ভুবনজয়ী নারী, শহীদানের গল্প শােন (১-৩), তােমার অলৌকিকতায় আজো অবাক পৃথিবী, ইসলাম একালের ধর্ম, আকাশে অঙ্কিত নাম। অনূদিত গ্রন্থ কুরআন অধ্যয়নের মূলনীতি, তাজা ঈমানের ডাক, হালাল হারাম, আমেরিকান নওমুসলিমদের ঈমানদীপ্ত কাহিনী, ইসলাম একমাত্র জীবনবিধান, হাদীসের দর্পণে আমাদের কাল, মানবতার নবী, আলােকিত নারী, দেশে দেশে, ইসলাম ও ফ্যাশনের সংঘাত, নির্বাচিত বয়ান (১-২), ভারতীয় নওমুসলিমদের ঈমান জাগানিয়া সাক্ষাৎকার, আল্লাহকে যদি পেতে চাও প্রভৃতি।