তাসকিন আহমেদ আমি তাসকিন আহমেদ। ডাক নাম তাজীম। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ছেলে। আমরা এখানকার ¯স্থানীয়। বর্তমানে আপনাদের দোয়ায় বাংলাদেশ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলছি। ২০১৫ এর ওয়ার্ল্ড কাপ আমার জীবনের প্রথম ওয়ার্ল্ডকাপ ছিল। এ খেলায় আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছি এবং কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছি। এটা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। আমি যৌথ ফ্যামিলির ছেলে। বাড়ির বাকী ফ্লোরগুলোতে চাচারা ও ফুফুরা থাকেন। আমি বাবা-মার একমাত্র ছেলে। অবশ্য তাদের সঙ্গে আমার খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমাদের ফ্যামিলিতে আমি, আমার আব্বা-মা এবং ছোট দুই বোন। আমি আব্বা-মা’র বড় সন্তান। তাই তারা আমার প্রতি একটু বেশি দূর্বল ছিলেন। যেহেতু আমি বড় এজন্য বাড়ির সবার কাছ থেকে বেশিই আদর পেতাম। তাছাড়া আমি দেখতেও খুব কিউট ছিলাম। তবে ভীষণ দুষ্টামিও করতাম। আমার কোনো কিছু চাওয়ার থাকলে সর্বপ্রথম দাদির কাছে আবদার করতাম। সেও হাসি মুখে আমার সকল আবদার পূরণ করত। আজ দাদি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হত। আমি বাংলাদেশের হয়ে জাতীয় দলে খেলছি। তিনি আমার খেলা দরুন ভাবে উপভোগ করতেন। কিš‘ আমার দুর্ভাগ্য। তিনি আমার খেলা উপভোগ করার পূর্বেই আমাদের সকলকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আমি খুব ফর্সা ছিলাম। তাই দাদি আমাকে আদর করে ধলা বলে ডাকতেন। আমি ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলা খুব পছন্দ করতাম। ক্রিকেটের খুবই ভক্ত ছিলাম। আমাদের বাড়ির সামনের জাতিসংঘ মাঠে প্রথম আমি ক্রিকেট খেলি। ওখানে বড় ভাইয়েরা খেলত। আমাকে অতিরিক্ত প্লেয়ার হিসাবে নিত। আমি তাতেই খুব খুশি ছিলাম। আমার কথা হলো আমি খেলতে পারলেই হলো, একজন খেলোয়ার হিসেবে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকবো। তখন এটাই আমার কাছে অনেক বড় ছিল। বিকালে স্যার পড়াতে আসতো। তখন বাড়ির কেউ আমাকে মাঠ থেকে হাত ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসতো। এটা আমার কাছে খুব কষ্টের ছিল। আমাদের মাঠে টূর্নামেন্ট নামে। আমি খেলার জন্য নতুন ট্রাওজার ও ব্যাট কিনি। ছোট ছিলাম। তাই ওরা আমাকে খেলতে দিবেনা। আমাকে খেলা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। তখন আমি খুব কান্না করি। কেঁদে কেঁদে আংকেলদের বলি-দেখেন, ওরা আমাকে খেলতে নিবেনা। আমাকে খেলা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। বড় ভাইয়েরা এবং টুর্নামেন্টের লোকেরা ওদেরকে ধমক দিয়ে বলে এই! তোরা একে খেলতে নে। তা না হলে তোদেরকে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দিয়ে দেব। তখন ওরা আমাকে খেলতে নেয়। ঐ দিনের কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমি নট আউট ছিলাম। নতুন ব্যাটটা দিয়ে ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে খেলেছিলাম। বোলিং করে একটি উইকেট পেয়েছিলাম। সেই আনন্দে সারা মাঠ দৌঁড়িয়ে বেড়িয়ে ছিলাম। এর কিছুদিন পর শুক্রবার, ঐদিন আমি দুপুর তিনটার সময় মাঠে খেলছিলাম, এমন সময় আব্বা বাড়িতে এসে আমাকে দেখতে না পেয়ে খুবই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন মাঠে এসে আমাকে খেলার মধ্যে থেকে ধরে ঐ ব্যাটটা দিয়ে পিটাতে পিটাতে বাড়িতে আনে। পিটাতে পিটাতে ব্যাটটা তো ভেঙ্গেই গেল। আমিও মার খেলাম। আব্বা আমার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত গলায় বললেন, সব সময় শুধু খেলা! আজ থেকে তোমার খেলাধূলা বন্ধ। আমি সুবোধ বালকের মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। এভাবে লেখাপড়া ও খেলাধূলার মধ্যে দিয়ে আমার সময় কাঁটতে লাগল। এরপর আমি আবহনী মাঠে প্রাকটিস্ শুরু করলাম। কোচ আমার বোলিং এ্যাকশন ও বোলিং দেখে বলল, তোমার বোলিং এ্যাকশন এবং বোলিং খুবই ভালো। নিয়মিত প্রাকটিস্ েআসো, দেখি কি করা যায়। ওখানে বড়দের তিনদিন এবং ছোটদের দুইদিন প্রাকটিস্ হত। আমি পাঁচ দিনই যেতাম। স্কুল থেকে এসে কোনো রকম কয়টা খেয়েই প্রাকটিস্ েচলে যেতাম। একদিন আব্বা আমাকে চেক করার জন্য আবাহনী মাঠে আসলো। আমি ওখানে কি করি, কেমন প্রাকটিস্ করছি, এগুলো দেখার জন্য। আব্বা লালমাটিয়ায় ব্যবসা করতেন। আবাহনী মাঠে তার কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা হয়। আব্বা তাদের সাথে গল্প করতে লাগল। এক পর্যায়ে তারা আব্বাকে বলল, কী ব্যাপার! তুই এখানে কেনো? আব্বা তাদেরকে বললেন, এখানে আমার ছেলে প্রাকটিস্ করতে আসে। তাই একটু ওর প্রাকটিস্ দেখতে আসলাম। এরপর থেকে প্রায়ই আমার প্রাকটিস্ দেখার জন্য আব্বা মাঠে আসতেন। একদিন কোচই আব্বাকে ডেকে বলল, ওর বোলিং খুব ভালো। নিয়মিত প্রাকটিস্ করলে আশা করা যায় ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে। তাছাড়া ওর খেলার প্রতি ঝোকও আছে। ওর এই আগ্রহ এবং আত্মবিশ্বাস ওকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। তখন আব্বা শুধু আমার প্রাকটিস্ই দেখেছেন। এরপর যখন আন্ডার টূর্নামেন্ট স্টার্ট হলো তখন আব্বা খেলা দেখতে গেলেন। আমার খেলা হয়তো তার ভালো লেগেছিল। বোলিং স্টাইল, এ্যাকশন, বলের গতি, বোলিংয়ের তীক্ষèতা তাকে দারুন ভাবে আকর্ষণ করে। এরপর থেকে আব্বা ও আমার সঙ্গে খেলার ব্যাপারে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হতে লাগল। যখন ডাইনিং টেবিলে এক সঙ্গে খেতে বসতাম তখন আমার খেলা নিয়ে আলোচনা হত। আব্বা বলতেন, তোমার অমুক ওভারের অমুক-অমুক বলটা ভালো হয়েছে, অমুক বলে এই সমস্যা ছিল ইত্যাদি। আমিও বলতাম, ‘আব্বা, গত কালকের প্রথম ওভারের বলগুলি কেমন হলো? আব্বাও অবলীলায় আমার প্রশংসা করে যেতেন। তিনি গ্যালারিতে উপস্থিত থেকে আমার প্রত্যেকটি খেলা উপভোগ করতেন। আব্বার হাসি মুখটি দেখে আমারও আত্মবিশ্বাস দ্বিগুন বেড়ে যেত। ২০০৭ সালের জানুয়ারীর ১০ তারিখে আমি আবাহনী মাঠে প্রথম প্রাকটিস্ করি। তখন থেকে ক্রিকেটের প্রতি আমার ভালোলাগাটা আরো বেশি তৈরি হতে লাগল। প্রাকটিস্রে দ্বিতীয় দিন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। আমি একজন ক্রিকেটার হব। যে কোনো কিছুর বিনিময় হলেও আমাকে ক্রিকেটার হতে হবে। তখন বাংলাদেশের জাতীয় দলের প্রত্যেকটি প্লেয়ার আমার কাছে স্বপ্নের রাজার মতো ছিল। মাশরাফি ভাই, আশরাফুল ভাই, সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই সবাই। তখন সাকিব ও মুশফিক ভাই খুব ইয়াং ছিল। তাদেরকে টিভিতে দেখতাম খুব ভালো লাগত। যদিও কখনো সামনাসামনি দেখা হত সেদিন উত্তেজনার মধ্যে থাকতাম, খুবই উত্তেজনার মধ্যে। এলাকায় এসে বন্ধুদের বলতাম, আজ মাশরাফি ভাইকে দেখেছি, আশরাফুল ভাইকে দেখেছি, এইÑসেই। তখন আমার মধ্যে টান-টান উত্তেজনা, অন্যরকম ভালোলাগা ও ভালোবাসা কাজ করত। এরপর আমি আন্ডার সেভেনটিনে ৩০ জনের মধ্যে ডাক পাই। ওখান থেকে নীল ন্যাশনাল টিমে খেলি। সেভেনটিনে খেলার পর আমার বলের গতি আরো বেড়ে যায়। আন্ডার ফিফটিনে খেলার সময়কালে বলের যে গতি ছিল সেভেনটিনে আসার পর তা দ্বিগুনে পরিণত হয়। তখন যারা নেটে খেলত তারা সবাই আমার বলে ভয় পেত। নেটে ঢুকার সময় বলতো-বাউন্সার মারিস না, দূরে দূরে বল কর, গায়ে মারিস না, হাফভলি বল কর ইত্যাদি। ওখানে আন্ডার ...............