ডক্টর রমা চৌধুরী কুড়ি শতকের বিদুষী নারীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯১ খিষ্ট্রাব্দের ২০ মার্চ কলকাতায় স্বর্গারোহণ করেন। তাঁর আদি নিবাস ছিলো বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার জয়সিদ্ধি গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন ব্যারিস্টার সুধাংশুমোহন বসু। ভারতবর্ষের প্রথম র্যাংলার স্বর্গীয় আনন্দমোহন বসু ছিলেন তাঁর পিতামহদেব। ডক্টর রমা চৌধুরী ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতাস্থ ব্রহ্ম বালিকা বিদ্যালয় থেকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়ে ম্যাট্রিক, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বি.এ. অনার্স এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। অক্সফোর্ড থেকে তিনি ডি.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রতীচ্যের এই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনিই প্রথম বাঙালি নারী ডক্টরেট। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর ওই কলেজের তিনি অধ্যক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ডক্টর রমা চৌধুরী কলকাতাস্থ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্বামী ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডক্টর যতীন্দ্রবিমল চৌধুরী। স্বামী ডক্টর যতীন্দ্রবিমল চৌধুরীর অকুণ্ঠ সহযোগিতায় তিনি আজীবন বেদান্ত দর্শন এবং সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বহুশতাব্দীলালিত বেদান্ত দর্শনের বহুবিচিত্র ব্যাখ্যা ও চর্চার ধারা কুড়ি শতকের শেষার্ধে এই অসামান্য বিদুষী এবং ব্রহ্মবাদিনী ডক্টর রমা চৌধুরী-র লেখনীতে মূর্ত হয়ে উঠেছিল। বেদান্ত দর্শনের ওপর তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ বাংলা, ইংরেজি এবং সংস্কৃত ভাষায় রচনা করে গেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল Vedanta and Sufism। কবি, বাগ্মী, নাট্যকার, শিক্ষা প্রশাসক, স্নেহশীল, সুহৃদয়ের অধিকারিণী ছিলেন এই ব্রহ্মবাদিনী ডক্টর রমা চৌধুরী। ডক্টর রমা চৌধুরী-র বেদান্ত দর্শন শিরোনামে উপস্থাপিত বর্তমান গ্রন্থে ডক্টর রমা চৌধুরী-র খিছু দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান অগ্রন্থিত প্রবন্ধ গ্রন্থাকারে উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশে ভারতীয় দর্শন, ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভাবাদর্শের একান্ত অনুরাগী ও বলিষ্ঠ প্রবক্তা ডক্টর এম. মতিউর রহমান।