ভূমিকা Alice in Wonderland হচ্ছে বিলাতি শিশু সাহিত্যের অতি-বিখ্যাত বই। এ বই শিশু সাহিত্যের একখানি দামি রত্ন। নানা দেশে এর নানা নকল বেরিয়েছে, তবু Alice in Wonderland-এর আদর কমেনি একটুও। রবীন্দ্রনাথ যখন ‘একটি আষাঢ়ে গল্প' বা ‘তাসের দেশ' নাটিকা লিখেছিলেন তখন যে তাঁর ‘Alice in Wonderland'-এর তাসের রাজা ও রানি প্রভৃতিকে মনে পড়েনি, একথা কিছুতেই বলা যায় না— কারণ Alice-এর কীর্তি তার অনেকদিন আগে থেকেই সাহিত্যে ছড়িয়ে পড়েছে। Alice-এর সৃষ্টিকর্তা বাংলা শিশু সাহিত্যের কত লেখককে যে সাহায্য করেছেন, তার আর সংখ্যা হয় না। স্বর্গীয় ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত বালকপাঠ্য উপন্যাস 'কঙ্কাবতী'র নানাস্থানে Alice এর আজব দেশের প্রতিধ্বনি শোনা যেতে পারে। স্বর্গীয় সুকুমার রায় ‘হ-য-ব-র-ল' লেখবার সময়ে পদে পদে Alice-এর স্রষ্টারই অনুসরণ করেছিলেন। এসব ছাড়া বাংলা দেশে এমন আরও অনেকগুলি ছেলে-মেয়েদের বই আছে, Alice স্বপ্নে Wonderland-এ না গেলে যাদের জন্ম সম্ভব হত না! এই বছরেই এমন বই বেরিয়েছে একাধিক। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এতদিন কেবল নকলেরই চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু সেইসঙ্গে আসলকেও দেখবার কোনো চেষ্টাই হয়নি! ‘Alice in Wonderland'-এর লেখক হচ্ছেন C. L. Dodgson, তিনি অক্সফোর্ডের অঙ্কের মাস্টার ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে ও মৃত্যু ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে। Lewis Carroll নাম নিয়ে এই বইখানি লিখেছিলেন তিনি ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে। নীরস অঙ্কের মাস্টারের হাত থেকে যে এমন সরস কাহিনি বেরুতে পারে, একথা সহজে কল্পনা করা যায় না। Dodgson সাহেবের হৃদয়টাও নিশ্চয় যোগ-বিয়োগ প্রভৃতির সংখ্যায় পরিপূর্ণ ছিল না ! বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েদের হাতে আমরা আসল বইখানিই উপহার দিলুম। কিন্তু স্থানে স্থানে মূল ইংরেজি বইয়ের অনুবাদ এদেশি ছেলে-মেয়েদের কাছে হেঁয়ালির মতো দুর্বোধ হবে। ইংরেজি ছড়াগুলিও বাংলার পক্ষে জুতসই নয়। তাই বাংলার জল-হাওয়ার উপযোগী করবার জন্যে সামান্য অদলবদল করতে হয়েছে
জন্ম ১৮৮৮, কলকাতা। সাহিত্যচর্চার শুরু মাত্র ১৪ বছর বয়সে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। খেয়ালি জীবন, ঘুরে বেড়িয়েছেন সাহিত্য সংস্কৃতির নানান স্রোতে। ‘ভারতী’ গােষ্ঠীর সাহিত্যিক হিসেবেই প্রথম পরিচয়। ‘বসুধা’ পত্রিকায় প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। বহু গান লিখেছেন, নাচ শেখাতেন, নাটকও লিখেছেন। সম্পাদনা করেছেন নাটক বিষয়ক সাময়িকপত্র ‘নাচঘর’। পরবর্তী সময়ে সম্পাদক ছিলেন ছােটদের বিখ্যাত পত্রিকা রংমশাল-এরও। কিশাের সাহিত্যের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। লিখেছেন অজস্র বই। বয়স্ক পাঠকদের জন্য কাব্য-অনুবাদে ‘ওমর খৈয়ামের রুবায়ত’ বা ছােটদের জন্য ‘যকের ধন, ‘দেড়শাে খােকার কাণ্ড’, ‘ঝড়ের যাত্রী’, ‘কিং কং’ সমান আদৃত। বিখ্যাত প্রবন্ধের বই ‘বাংলা রঙ্গালয় ও শিশিরকুমার। জীবনাবসান ১৮ এপ্রিল ১৯৬৩।