"মুসলিম বর - কনে ইসলামিবিয়ে" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বিয়ে নিয়ে আমাদের সমাজে নানা রসকথা প্রচলিত আছে। সত্যি বলতে, বিয়ে নিয়ে সবার মনেই একটা ভাবনাদুর্ভাবনা, খানিকটা অজানা শঙ্কা ও শিহরণ দোলা দেয় অজান্তেই। দুজন মানব-মানবীর বহতা জীবন পূর্ণতা পায় বিয়ে নামের এক পুণ্যবন্ধনে। সে পূর্ণতা থেকে উৎসারিত হয় বর্ণিল পুষ্পরেণু। কিন্তু সববিয়েই কি আনন্দ ও পবিত্রতার রঙে বর্ণিল হয়? সববিয়েই কি ইসলামের অনুপুঙ্খ বিধানের গণ্ডিতে পালিত হয়? এ বিষয়টি প্রতিটি মুসলমানের একান্তভাবে হৃদয় দিয়ে ভাবা প্রয়ােজন। কারণ, এই একটি বন্ধনের ভেতর লুকিয়ে থাকে মানবজন্ম স্বার্থকতার অনেক কিছু। ইসলাম বিয়েকে সবচেয়ে ঝামেলামুক্ত সহজ কাজ বলে ঘােষণা দিয়েছে। হজরত রাসুলেকারিম (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসালাম) ও হজরত সাহাবায়েকেরাম (রদিয়াল্লাহু আনহুম) ঝামেলামুক্ত সহজ বিয়ের দৃষ্টান্তস্থাপন করে গেছেন। অথচ আজ বিয়ে সবচেয়ে কঠিন ও ঝামেলার কাজে পরিণত হয়েছে। বিয়ে মূলত একটি আনন্দের বিষয় কিন্তু আজ তা বিপদ ও দুশ্চিন্তার উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কতাে যুবতী গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করছে, কতােজন আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিচ্ছে। আর কতাে ধনীপিতা কন্যাসন্তান জন্মের কথা শুনে তেলে-বেগুনে গরম হয়ে উঠছে; শুধু কন্যাসন্তান প্রসবের অপরাধে নিজের স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছে। পরিতাপের বিষয়! এ যুগেও কন্যাসন্তান প্রসব করা বিপদের কারণ ও অপরাধ রয়ে গেছে। বিয়ে এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে হজরত থানভি (রহমাতুল্লাহি আলায়হি)-এর গভীর অনুসন্ধিৎসা এবং দরদি পথনির্দেশনা আমাদের মুসলিমমানসে এক অনস্বীকার্য সংযােজন। যেকোনাে বয়সের পাঠকেরই অব্যশপাঠ্য বই এটি।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।