কাহিনীর ছলে চলচ্চিত্রের নান্দনিক ও প্রায়োগিক দিক কেবল সে-ই বয়ান করতে পারে চলচ্চিত্র নির্মাণশৈলীর ওপর যার অবাধ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তেমনি এক ব্যক্তিত্ব হলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা জাঁ-নেসার ওসমান। যিনি গত ৪০ (চল্লিশ) বছরে বিজ্ঞাপন-ছবি বানিয়েছেন প্রায় সাড়ে তিনশ, ডকুমেন্টারি প্রায় গোটাপঞ্চাশ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র গোটাপাঁচেক আর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দুটি। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর বিচরণ ঈর্ষণীয়। ১৬ মি. মি. ম্যাগনেটিক, ১৬ মি. মি. বোলেক্স- স্প্রিং ক্যামেরা থেকে শুরু করে ৩৫ মি. মি. স্টেডিক্যাম ইউম্যাটিক, বেটাক্যাম ডিভিডি হালের ক্যামেরা ইকেগামী সহ যে কোনো ক্যামেরা পরিচালনায় সিদ্ধহস্ত এই পুনা-ফিল্ম ও টিভি ইনস্টিটিউট ডিপ্লোমা হোল্ডার, ফ্রান্সের ‘ইকোল সুপেরিয়র দেতুদ সিনেম্যাটোগ্রাফি’ থেকে পাস করে আসার পর চলচ্চিত্রে তাঁর লাইটিং তো প্রবাদবাক্যের মতো চলচ্চিত্রনির্মাতাদের মুখে মুখে ফেরে। তাঁর এক বিজ্ঞাপন ‘মাছের রাজা ইলিশ আর বাতির রাজা ফিলিপস’ প্রায় একনাগাড়ে ১৪ বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়ে বিশ্বে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ‘উহুঁ, এগুলোতো বড়দের খাবার তোমার জন্য সেরেল্যাক’ ‘ইকোনো লেখে চমৎকারÑ এক কলমে মাইল পার’। ‘সবাই এবার মেলাও হাত তিনশ টাকায় কিস্তি মাৎ’। ‘আব্বুর জন্য ইকোনো আম্মুর জন্য ইকোনো’ ‘বম্বে সুইটস-এর রিং চিপস্ ....’ ‘রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স কোম্পানি’ এক একটি বিজ্ঞাপন-ছবি এক-একটি ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করিয়েছে। বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে এ ছবিগুলো রেফারেন্স হিসেবে পড়ানো হয়। এমনি এক ধী-শক্তিসম্পন্ন অভিজ্ঞ নির্মাতার এই পুস্তক ‘চলৎ চিত্র চলে কেন’ যে কোনো পাঠকের কাছে বিনোদনযোগ্য সেই সাথে হাস্যরসের আবডালে সমাজের যে বীভৎসতা প্রকাশ করেছেন তা সত্যিই লেখককে দুঃসাহসের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। বিখ্যাত কথাশিল্পী শওকত ওসমানের কথা কোট করে যখন পৃষ্ঠা ৫১-তে, চরিত্র বলে ওঠে ‘আমার মনে হয় হালারা কুত্তির মূত্র...’ তখন বাংলাদেশের কিছু বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর বীভৎসতা রক্তচোষা ড্রাকুলারের মতো মুখব্যাদা করে...’ সত্যই আজ বাঙালি সমাজ কেমন এক নেশাগ্রস্ত মানবের মতো কেবল টাকার পিছনে বেশ্যার মতো ছুটে বেড়াচ্ছে। তা ‘চলৎ চিত্র চলে কেন’র প্রতিটি ছত্রে ছত্রে অনুরণিত হচ্ছে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। পাঠক না পড়লে বুঝবেন না। কি এক অপরূপ অনবদ্য সৃষ্টি এই ‘চলৎ চিত্র চলে কেন...’ অল্প কথায় তো এই বইটি সম্পর্কে বেশি কিছু বলা যাবে না। তবে পরিশেষে এইটুকু বলব প্রতিটি বাঙালির এই বইটির একটি কপি রেফারেন্স হিসেবে আমরণ সাথে রাখা উচিত, রাখতে হবে বলেই আমার বিশ্বাস। বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর... জয়তু ‘চলৎ চিত্র চলে কেন...’।