"স্তানিস্লাভস্কির অভিনয়পদ্ধতি তত্ত্ব ও প্রয়োগ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মঞ্চে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের মূলকথা হল ‘স্তানিস্লাভস্কি-পদ্ধতি। এ পদ্ধতি শিক্ষণের প্রায়ােগিক প্রণালীর পুনঃপরীক্ষাপূর্বক ব্যাপ্তি এ গ্রন্থ। বিশেষত অভিনেতার বিশ্বাসযােগ্য চরিত্র সৃষ্টিতে বিভিন্ন সমস্যা উদ্ভূত হয়ে থাকে। এ গ্রন্থে, এসব সমস্যার সমাধান রয়েছে; অভিনেতার প্রশিক্ষণ-প্রণালী’-র সুবিস্তারিত বিবরণও রয়েছে। একজন ‘অ-অভিনেতা কোন কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিনেতা হয়ে উঠবেন, সেসব প্রক্রিয়া এখানে আলােচিত হয়েছে। ডক্টর মাে. মুস্তাফিজুর রহমান এক দশকেরও অধিককাল স্তানিস্লাভস্কি'-চর্চায় নিয়ােজিত আছেন। তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ অবদান এবং স্তানিস্লাভস্কির বৈপ্লবিক আবিষ্কারগুলাের একটি চূড়ান্ত সারাংশ এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে। বস্তুত আত্মকেন্দ্রিক প্রকাশ ব্যক্তির উপরে নির্ভর করে, তার তত্ত্ব অভিনয়ের জনপ্রিয় ধারণাকে বর্জন করেছে। এক্ষেত্রে স্তানিস্লাভস্কি একটি সুচিন্তিত শিক্ষা দিয়েছেন: ‘নিয়ন্ত্রিত’ ও ‘সচেতন কৌশল। এগুলাে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যগত হয়। অভিনয়কালে, এ কৌশল, অভিনেতার গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা-সৃষ্টি করে থাকে। স্তানিস্লাভস্কি এ কৌশলের নাম দিয়েছেন : ‘মনঃকৌশল। এ কৌশলটি ‘অ-অভিনেতা’-র কিংবা অভিনেতা’-র নিরন্তর অনুশীলন করা উচিত। ডক্টর মাে. মুস্তাফিজুর রহমান স্তানিস্লাভস্কি গবেষণায় অদ্যাবধি নিরত। এ বিষয়ে, তাঁর কতিপয় গবেষণালব্ধ অধ্যায় এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে। স্তানিস্লাভস্কি-চর্চাকারীগণ, নিরতকালেই পুরস্কারস্বরূপ সৃষ্টিশীল জীবনের অমূল্য উপহার পাবেন, এ প্রত্যাশা অযথার্থ নয়।
ডক্টর মো. মুস্তাফিজুর রহমান ৮ কার্তিক, মঙ্গলবার, ১৩৭৬ বঙ্গাব্দে মেহেরপুর সদর থানার অন্তর্গত আমঝুপী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ডক্টর মুস্তাফিজ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ফুটবলার মরহুম লুৎফর রহমান এবং বেগম মাজেদা রহমানের একমাত্র পুত্র। তাঁর স্ত্রী, বিশিষ্ট নজরুল-গবেষক ও কণ্ঠসঙ্গীতশিল্পী ডক্টর মাফরুহা হোসেন সেঁজুতি। তাঁদের একমাত্র কন্যার নাম শ্রুতি রহমান। ডক্টর মো. মুস্তাফিজুর রহমান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একনিষ্ঠ গবেষক ও অনুপম নাট্যতাত্ত্বিক। ১৯৯৩ ও ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'নাটক'-বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স ও এম.এ.-ডিগ্রি লাভ করেন এবং ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পি-এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর শিশুনাট্য প্রতিযোগিতার 'আলোক পরিকল্পনা', 'পোশাকপরিকল্পনা' ও 'মঞ্চপরিকল্পনা' (যুগ্ম)-এর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। এ প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল 'চিলড্রেন থিয়েটার হোমস্' প্রযোজনার শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও অর্জন করে। ডক্টর মো. মুস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির, বাংলা একাডেমীর জীবনসদস্য (১৮৪১) এবং এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্য (১৯৩৪)। ডক্টর মো. মুস্তাফিজুর রহমান-প্রণীত গবেষণা- গ্রন্থগুলোর মধ্যে স্তানিস্লাভস্কি পদ্ধতি : অভিনয় প্রথম দশটি পাঠ (ঢাকা, ১৯৯৪ খ্রি.), স্তানিস্লাভস্কির অভিনয় পদ্ধতি (ঢাকা, ১৯৯৯ খ্রি.), কবিরায়বিনোদ-প্রণীত ‘পদ্মাপুরাণ’- কাব্যে নাটকের উপাদান (ঢাকা, ২০০৮ খ্রি.), ছোটোদের অভিনয় (দ্বিতীয় সং, ঢাকা, ২০১১ খ্রি.), স্তানিস্লাভস্কির অভিনয়পদ্ধতি : তত্ত্ব ও প্রয়োগ (দ্বিতীয় সং., ঢাকা, ২০১১ খ্রি.), অভিনয়কলা প্রথম খণ্ড (ঢাকা, ২০১১ খ্রি.), ভাষাবিধান : ব্যাকরণ ও নির্মিতি (পরিমার্জিত সং.. ঢাকা, ২০১২ খ্রি.), আম্রকানন (পরিমার্জিত সং., ঢাকা, ২০১২ খ্রি.), এলবির তিনটি নাটক (পরিমার্জিত সং, ঢাকা, ২০১২ খ্রি.), সোনিয়া মুরপ্রণীত স্তানিস্লাস্কির অভিনয়পদ্ধতি (ঢাকা, ২০১২ খ্রি.) এবং আবৃত্তিকলা (ঢাকা, ২০১২ খ্রি.) অন্যতম ।